Letter of Motivation

কিভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য মোটিভেশনাল লেটার লিখবেন

বিশ্বের সেরা সেরা অনেক বিশ্ববিদ্যালয় তাদের ক্যাম্পাসে ভর্তির শর্ত হিসেবে মোটিভেশন লেটার চেয়ে থাকে। আজকে এই প্রবন্ধে মোটিভেশনাল লেটার নিয়ে আলোচনা করব। খুজে বের করার চেষ্টা করবো কিভাবে মোটিভেশনাল লেটার আপনার ভর্তি প্রক্রিয়ায় সহায়ক ভূমিকা পালন করে।

মোটিভেশন লেটার কী?

মোটিভেশন লেটার বলতে সাধারণভাবে আপনি কে, অতীতে উল্লেখযোগ্য কী কী করেছেন, আপনার বিশেষ গুণাগুণ (বিশেষ গুণাগুণ মানে একাডেমিক অর্জন বা অবস্থান বুঝায়, এটা এক্সট্রা কারিকুলার এক্টিভিটিজ বুঝায় না), কেন আপনি এই সাবজেক্টে পড়তে চান, এই বিশ্ববিদ্যালয়েই কেন পড়তে চান, এই দেশেই কেন পড়তে চান এবং সবশেষে এই সাবজেক্টে পড়লে সেটা কিভাবে ভবিষ্যতে আপনার ক্যারিয়ার গঠনে সাহায্য করবে এর লিখিত বর্ণনাকেই মোটিভেশন লেটার বলা হয়।

মোটিভেশন লেটারের গুরুত্ব-

কোন বিশ্ববিদ্যালয় যদি মোটিভেশন লেটার চেয়ে থাকে, মানে যদি আবশ্যিকভাবেই চেয়ে থাকে, তাহলে আপনাকে অবশ্যই মোটিভেশন লেটারকে একাডেমিক সিজিপিএ এবং আইইএলটিস স্কোরের মতোই গুরুত্বপূর্ন বলে ধরে নিতে হবে। কেননা এটিকে একটি প্যারামিটার হিসেবে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ভর্তির যোগ্যতা হিসেবে এর উপর নির্দিষ্ট পরিমানে পারসেন্টেজ দিয়ে থাকে। যা আপনার ভর্তি প্রক্রিয়ায় অবশ্যই ভূমিকা পালন করে। যদিও কিছু বিশ্ববিদ্যালয় আগে থেকেই বলে দেয় এখানে ঠিক কত পার্সেন্ট থাকবে এবং কিছু বিশ্ববিদ্যালয় এটা গোপন রাখে। মোদ্দাকথা হলো তারা মোটিভেশন লেটারকে খুবই সিরিয়াসলি নিয়ে থাকে। আপনার ভর্তির সুযোগ পাওয়া না পাওয়া অনেকটা এই লেটারের উপর নির্ভর করে।

মোটিভেশনাল লেটার লেখার নিয়ম-

মোটিভেশিনাল লেটার কোনো অবস্থাতেই কপি করতে যাবেন না। একান্তই নিজের মতো করে নিজের ভাবনা ফুটিয়ে তুলতে হবে এই লেটারে। প্রয়োজনে এটা করতে গিয়ে কয়েকমাস সময় নিন, বারবার লিখুন, মিলিয়ে দেখুন আপনার ভাবনা ফুটিয়ে তুলতে পারছেন নাকি। একটা ইউনিক মোটিভেশনাল লেতার আপনাকে ভর্তিযুদ্ধে কতোটা এগিয়ে দেবে সেটা আপনার ধারণাতেই নেই। আর তাই নিজের স্ট্রং পয়েন্ট খুজুন, নিজের পছন্দের মাত্রা ও দক্ষতার লেভেল খুজে বের করুন, ভবিষ্যতে কি কি করতে চান ও কি কি করতে পারেন তাঁর একটা যৌক্তিক রূপরেখা ফুটিয়ে তুলুন, নিজের রিসার্চ ইন্টারেস্ট খুজে বের করুন। তারপর লিখতে বসুন আপনার লেটার অফ মোটিভেশন, তুলে ধরুন নিজেকে নিজের ভবিষ্যৎ প্রফেসরের সামনে আর নিজেকে আবিষ্কার করুন স্বপ্নের ক্যাম্পাসে।

যদিও এটা লিখার কোন প্রতিষ্ঠিত নিয়ম নেই, তাই একেকজন একেকভাবে এটা লিখতে বলে থাকেন। তবে সাধারণভাবে কিছু বিষয়ের উপর ফোকাস করে নিজের মতো করে লিখে নিলেই হবে। যেমন:

১) নিজের পরিচয়, স্কিল এবং একাডেমিক ব্যাকগ্রাউন্ডকে প্রথমে উপস্থাপন করুন। এটা অনেকটা আপনার সিভির সারাংশ বলতে পারেন। এখানে নিজের ঢোল নিজে প্রচুর পরিমানে পেটাতে হবে। প্রমাণ করতে হবে আপনি পৃথিবীর সেরা ছাত্রদের একজন। সহজ কথায় আপনাকে তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করলে তারাই বেশি লাভবান হবে এটা বুঝানোর একটা চেষ্টা করা আর কি!

২) এই অংশে আপনি কেন এই সাবজেক্ট পড়তে আগ্রহী এবং আপনি কেন এই সাব্জেক্টের জন্য রাইট ক্যান্ডিডেট সেটা লিখুন। যদিও ব্যাচেলরের সাথে রিলেটেড মাস্টার্স না হলে এই অংশে একটু ঝামেলা পোহাতে হয়। ব্যাচেলরে পঠিত মডিউল থেকে যে যে যায়গায় আপনার পছন্দের সাবজেক্টের মিল রয়েছে সেখানে ফোকাস করুন।

৩) এই বিশ্ববিদ্যালর কেন? এখানে আপনার পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্য তুলে ধরে বলুন যে, এটাই আমার কাঙ্খিত বিশ্ববিদ্যালইয় যেটা আমি অনেকদিন থেকে খুজছিলাম।

৪) এই দেশ-ই কেন? আপনি যেই দেশে পড়তে চাচ্ছেন সে দেশ কেনো পছন্দ আপনার। রিসার্চে খুব ভাল, বিশ্বমানের ডিগ্রী, এখানে পড়লে ফিউচারে সব উড়ায় দিতে পারবেন ব্লা ব্লা লেখতে হবে।

৫) ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা। এই সাবজেক্ট আপনার ভবিষ্যৎ গড়ে দিতে কিভাবে আপনার কাজে লাগবে, এটা নিয়ে আপনার প্ল্যান ইত্যাদি লেখতে হবে। এই অংশ কনভিন্সিং করার একটা উপায় হচ্ছে, প্রতিটি সাবজেক্টের ওয়য়েবসাইটে ক্যারিয়ার প্রস্পেক্টস লেখা থাকে, সেখান থেকে আইডিয়া নিন, কিভাবে কাজে লাগাতে চাচ্ছেন।

মোটিভেশন লেটার আপনার ভর্তিকে সহজ করে দিতে পারে।

মোটিভেশান লেটার না চাইলে কি দিতে হবে?

উত্তর হচ্ছে ‘না’। না চাইলে দিতে হবে না। যেখানে চাওয়া হয় নাই সেখানে লেটার অফ মোটিভেশনের উপর নির্দিষ্ট কোনো পারসেন্টেজ নাই। সুতরাং, আপনার দেওয়া না দেওয়া এডমিশন ডিসিশানে প্রভাব ফেলবে না।

শুরু এবং শেষ কীভাবে করবো?

আপনার মোটিভেশনাল লেটার কে পড়বেন তা যদি আপনি জানেন, তবে তাঁর নাম উল্লেখ করে ‘ডিয়ার অমুক’ বলে শুরু করতে পারেন। আর যদি নাম জানা না থাকে তাহলে ‘ডিয়ার স্যার’ অথবা ‘লেটার অব মোটিভেশন’ হেডিং দিয়ে ডিরেক্ট বক্তব্যে চলে যেতে পারেন। তবে শেষ করতে হবে নিজের ফুল নেইম, সিগনেচার এবং তারিখ দিয়ে।

সাইজ: লেটার অফ মোটিভেশন এক পেজের মধ্যে শেষ করুন এবং আরো স্পেসিফিক হবার জন্য ওয়েবসাইটে গিয়ে ভার্সিটি রিকোয়ারমেন্টস দেখে সেই অনুযায়ী লিখতে শুরু করুন।

সো, ডিয়ার ক্যাণ্ডিডেটস, শুরু করে দিন আপনাদের মিশন। বি অরিজিনাল এন্ড গুড লাক!

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *