বজ্রপাত থেকে বাঁচতে করণীয়

বাংলাদেশে জুনের মাঝামাঝি থেকে আগস্টের মাঝামাঝি পর্যন্ত বর্ষাকাল হলেও মোটাদাগে মার্চের মাঝামাঝি বা শেষভাগ থেকেই ঝড়বৃষ্টি শুরু হয়। বিশেষত এই সময়ে কালবৈশাখী ঝড় ও প্রবলবেগে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যাবার পাশাপাশি ঘনঘন বিদ্যুৎ চমকানোর সাথে বিকট শব্দে বজ্রপাত হয়ে থাকে। প্রতিবছর এদেশে বজ্রপাতে অনেক প্রাণহানীর ঘটনা ঘটে। তাই বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতর  বজ্রপাত থেকে বাঁচতে ২০টি জরুরি নির্দেশনা দিয়েছে। যেগুলো মেনে চললে বজ্রপাতে ক্ষয়ক্ষতি অনেকাংশে হ্রাস পাবে।

বজ্রপাতের সময় পালনীয় নির্দেশনাগুলো হলো-

১. বজ্রপাতের ও ঝড়ের সময় বাড়ির ধাতব কল, সিঁড়ির ধাতব রেলিং, পাইপ ইত্যাদি স্পর্শ করা যাবে না। মোদ্দাকথা হলো বিদ্যুৎ পরিবাহী কোন ধাতুর সংস্পর্শ এড়িয়ে চলতে হবে।

২. প্রতিটি উঁচু দালানে বজ্র নিরোধক বিশেষ দণ্ড স্থাপন নিশ্চিত করতে হবে, যা বজ্রপাতে প্রবাহিত বিদ্যুৎ শক্তিকে ভূপৃষ্ঠে পরিবহন করবে।

৩. যদি খোলা মাঠে বা খোলা জায়গায় অনেকে একত্রে অবস্থানকালীন বজ্রপাত শুরু হয় তবে প্রত্যেকে আবশ্যিকভাবে ৫০ থেকে ১০০ ফুট দূরে দূরে অবস্থান করতে হবে।

৪. বাড়িতে যদি পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকে তাহলে বাড়ির সকল সদস্যের এক কক্ষে অবস্থানের পরিবর্তে আলাদা আলাদা কক্ষে অবস্থান নিশ্চিত করা।

৫. বজ্রপাতের সময় খোলা জায়গায় হলে বড় কোন গাছের নিচে আশ্রয় নেয়া যাবে না কেননা গাছ বিদ্যুৎ সুপরিবাহী। তাই গাছ থেকে অন্তত চার মিটার দূরে অবস্থান নিতে হবে।

বজ্রপাতের সময় নিরাপদ জায়গায় অবস্থান করুন

৬. আশেপাশে কোন ছেঁড়া বৈদ্যুতিক তার থাকলে সেটা থেকে নিরাপদ দুরত্বে অবস্থান নিতে হবে। 

৭. বজ্রপাতের ক্ষয়ক্ষতি কমানোর লক্ষ্যে বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতির প্লাগগুলো লাইন থেকে বিচ্ছিন্ন রাখতে হবে। সম্ভব হলে মেইন সুইচ অফ করে দিতে হবে।

৮. বজ্রপাতে আহত ব্যক্তিদের সাধারণত বৈদ্যুতিক শকে আহত ব্যক্তিদের মতো করেই চিকিৎসা দিতে হবে।

৯. বাংলাদেশে সাধারণত এপ্রিল-জুন মাসে বজ্রপাত বেশি হয়। এই সময়ে আকাশে মেঘ দেখা গেলে ঘরে অবস্থান করা-ই উত্তম হবে।

১০. ঝড় শুরু হলে কিংবা আকাশে বজ্রপাতের আশংকা দেখা দিলে যত দ্রুত সম্ভব নিকটবর্তী দালান বা কংক্রিটের ছাউনির নিচে আশ্রয় নিন।

১১. বজ্রপাতের সময় বাড়িতে থাকলে লোহা বা ধাতব কাঠামো যেমন, জানালার গ্রীলের কাছাকাছি, বেলকনি বা বারান্দায় অবস্থান করা যাবে না এবং অবশ্যই ঘরের ভেতরে বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম বা বৈদ্যুতিক বোর্ড থেকে দূরে থাকুন।

১২. আকাশে ঘন-কালো মেঘ দেখা গেলে ঘর থেকে বাইরে না যাওয়া উত্তম, তবে অতি জরুরি প্রয়োজনে রাবারের জুতা পরিধান করে বাইরে বের হওয়া যেতে পারে।

১৩. বজ্রপাতের সময় অবশ্যই উঁচু গাছপালা, বৈদ্যুতিক খুঁটি, তার, ধাতব খুঁটি ও মোবাইল টাওয়ার ইত্যাদি থেকে নিজেদের দূরে রাখুন।

১৪. বজ্রপাতের সময় জরুরি প্রয়োজনে বাইরে বের হতে হলে অবশ্যই প্লাস্টিক বা কাঠের হাতলযুক্ত ছাতা ব্যবহার করতে হবে।

১৫. বজ্রপাতের সময় খোলা জায়গা, মাঠ বা উঁচু স্থানে অবস্থান করবেন না, যত দ্রুত সম্ভব এসব স্থান পরিত্যাগ করে নিরাপদ অবস্থানে চলে যেতে হবে।

১৬. আকাশে যদি কালো মেঘ দেখা যায় তখন আবশ্যিকভাবে নদী, পুকুর, ডোবা, জলাশয় ইত্যাদি থেকে দূরে চলে যান, অর্থ্যাৎ জলের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলুন।

১৭. বজ্রপাতের সময় শিশুরা যেন খোলা মাঠে খেলাধুলা চালিয়ে যেতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখুন। শিশুদের বাইরে খেলাধুলা থেকে বিরত রাখুন এবং নিজেরাও খোলা মাঠে খেলাধুলা থেকে বিরত থাকুন।

১৮.  বজ্রপাতের সময় নিতান্তই যদি খোলা মাঠে থাকতে হয়, কিংবা নিকটবর্তী কোন নিরাপদ আশ্রয় না থাকলে প্যানিকড না হয়ে পায়ের আঙুলের ওপর ভর দিয়ে এবং কানে আঙুল দিয়ে মাথা নিচু করে জায়গায় বসে পড়ুন।

১৯. বজ্রপাতের সময় গাড়ির মধ্যে থাকাকালীন গাড়ির ধাতব অংশ থেকে শরীরকে দূরে রাখুন, কোনভাবেই ধাতব অংশের সাথে শরীরের কোন অংশের সংযোগ ঘটাবেন না। যদি সম্ভব হয় তবে গাড়িসহ কোনো কংক্রিটের ছাউনির নিচে আশ্রয় নিন।

২০. জলাশয়ে মাছ ধরার বজ্রপাতের সম্ভাবনা দেখা দিলে এ সময় মাছ ধরা বন্ধ রেখে নৌকার ছাউনির নিচে অবস্থান করুন।

বজ্রপাতের ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে সচেতন হোন, নিজে বাঁচুন অন্যকেও সচেতন করুন। 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *