Concert for Bangladesh

মুক্তিযুদ্ধে বিদেশী সংস্কৃতিকর্মী বন্ধুদের অবদান

বায়ান্নর ভাষাসংগ্রামের পর থেকে দীর্ঘ দুই যুগের সংগ্রাম আর আন্দোলনের মাধ্যমে বাঙ্গালী জনগোষ্ঠী যেভাবে জেগে উঠেছিলো তার চুড়ান্ত প্রতিফলন ঘটেছিলো ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে মরণপণ সশস্ত্র সংগ্রাম, আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধে। বাংলার প্রায় সব লেখক, শিল্পী, সংস্কৃতিকর্মী ও বুদ্ধিজীবীদের পাশাপাশি বিদেশী সংস্কৃতিকর্মী বন্ধুরাও এ লড়াইয়ের সঙ্গে শুধু সংহতি প্রকাশ করেই তাঁদের দায়িত্ব শেষ করেননি, বরং প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষাভাবে লড়াইয়ে অংশও নিয়েছেন। কবিতা, গান, নাটক, চিত্রকলা, সিনেমাসহ বিভিন্নভাবে দেশের মানুষকে তাঁরা উদ্বুদ্ধ ও অনুপ্রাণিত করেছেন। মুক্তিযুদ্ধে বিদেশী সংস্কৃতিকর্মী বন্ধুদের অবদান অস্বীকার করার উপায় নেই। আমরা তাদের কাছে চিরঋণী।

একাত্তরে দেশের অভ্যন্তরে বা দেশের বাইরে প্রতিবেশী ভারতে এদেশের সাহসী সংস্কৃতিকর্মীরা  যখন তাঁদের সব শ্রম দিয়ে অনুপ্রেরণা সৃষ্টির কাজ করে যাচ্ছেন, তখন আন্তর্জাতিক পরিসরেও অনেক বিশ্বনন্দিত শিল্পী, সাহিত্যিক, কবি বা গায়কেরা একইভাবে আমাদের স্বাধীনতার সমর্থনে বিদেশের মাটিতে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত গঠনের জন্য ব্যাপকভাবে প্রচারণা চালিয়েছেন। তাঁরা কবিতা পাঠ করে, কনসার্টে গান গেয়ে, ছবি এঁকে এবং সংহতি আন্দোলন গড়ে তুলে ১৯৭১ এ আমাদের মহাবিপর্যয়ের দিনগুলোতে সক্রিয়ভাবে পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। এভাবেই বাংলাদেশের স্বাধীনতাসংগ্রামের পক্ষে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে সংহতি প্রকাশ করে আমাদের স্বাধীনতা আন্দোলনে তাঁরা বিশাল অবদান রেখেছেন।

যাদের কাছে আমাদের এই দেশ ও দেশের মানুষ ঋণী। যেসব বিদেশী বন্ধুদের আমরা গভীর শ্রদ্ধা ও ভালবাসা নিয়ে স্মরণ করবো তাঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন খ্যাতনামা আর্জেন্টাইন লেখিকা ও রবীন্দ্র-অনুরাগী ভিক্টোরিয়া ওকাম্পো, যাকে কবিগুরু ‘বিজয়া’ উপাধিতে ভূষিত করেছিলেন, প্রখ্যাত ফরাসি মানবতাবাদী সংগ্রামী লেখক আঁদ্রে মালরো, খ্যাতিমান ভারতীয় সেতারবাদক পণ্ডিত রবিশঙ্কর, বিখ্যাত ‘বিটলস’-ব্যান্ডের গায়ক জর্জ হ্যারিসন ও রিঙ্গো স্টার, নোবেল বিজয়ী কবি ও গায়ক বব ডিলান, যুক্তরাষ্ট্রের কবি অ্যালেন গিন্সবার্গ, রাশিয়ার কবি আন্দ্রেই ভজনেসেনস্কি, অস্কার বিজয়ী ব্রিটিশ অভিনেত্রী গ্লেন্ডা জ্যাকসন, আমেরিকান গায়িকা জোয়ান বায়েজ প্রমুখ।

মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা

তবে সবার আগেই বলতে হবে আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতের কথা। ১৯৭১ এর ভারতের নিরঙ্কুশ সমর্থন ও সহায়তা স্মরণ করতে হবে সর্বাগ্রে। ভারতের প্রতিটি রাজ্য, ও রাজ্যের মানুষেরা বাংলাদেশকে অকুণ্ঠ সমর্থন দিয়েছে। তারই প্রেক্ষিতে একাত্তরের ২৩ এপ্রিল মহারাষ্ট্রে গঠন করা হয় ‘বাংলাদেশ সহায়ক কমিটি’, যার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন অভিনেত্রী ওয়াহিদা রহমান, শর্মিলা ঠাকুরসহ বলিউড তথা মুম্বাই (তৎকালীন বোম্বে) ফিল্ম সিটির অনেক নামী তারকারা। বাংলাদেশের সমর্থনে বোম্বেতে (এখন মুম্বাই) অনেক অনুষ্ঠান হয়। এসব অনুষ্ঠানে বলিউডের অনেক তারকা শিল্পীরা সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। তাঁদের মধ্যে ছিলেন লতা মঙ্গেশকর, কিশোর কুমার, মান্না দে, দিলীপ কুমার, নার্গিস, সুনীল দত্ত, রাজেশ খান্না প্রমুখ। বোম্বেতে বাংলাদেশ নিয়ে কাইফি আজমি, শাহির লুধিয়ানি, সলিল চৌধুরী, মীনা কুমারীরাও ভূমিকা রেখেছিলেন।

৩ মে মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্যার্থে মহারাষ্ট্রে বাংলাদেশ সহায়ক কমিটি আয়োজন করে শচীন দেববর্মনের একক সংগীতসন্ধ্যার। আবার ‘বৃহৎ বোম্বে বাঙালি সমাজ’ আয়োজিত অনুষ্ঠানেও শচীন দেববর্মন ‘তাগদুম তাগদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল’ গানটি পরিবেশন করেন। সে সময়কার ভারতীয় প্রায় সব ভাষার শিল্পী, সাহিত্যিক ও সংস্কৃতিকর্মীদের ভূমিকা কখনোই ভুলে যাওয়া সম্ভব নয়। অস্কার জয়ী চলচ্চিত্র নির্মাতা ও লেখক সত্যজিৎ রায়, লেখক তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, কবি বিষ্ণু দে, সাহিত্যিক মুলকরাজ আনন্দ, কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়, কাইফি আজমি, লেখক দীপেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, শিল্পী মকবুল ফিদা হুসেন, অভিনেতা রাজ কাপুর, গায়ক ও সুরকার শচীন দেববর্মন, প্রয়াত গায়িকা লতা মঙ্গেশকর,  হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, দেবব্রত বিশ্বাস, সুচিত্রা মিত্র, ভূপেন হাজারিকা, সলিল চৌধুরী এবং আরও অনেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতাসংগ্রামের সঙ্গে সহমর্মিতা জানিয়েছেন, নানাভাবে সহযোগিতা করেছেন। এদেশে পাকিস্তানি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করে দিয়ে এবং তার বিরুদ্ধে জনমত গঠনে নিজেদের সাধ্যমতো সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়ে আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের পথ সহজ করতে ভূমিকা পালন করেছেন। তাদের গান, নাটিকা, আমাদেরকে উদ্দীপিত করে এখনো। 

১৯৭১ এর প্রায় পুরো নয়মাসের এই যুদ্ধে কলকাতা ও পশ্চিমবঙ্গের সব কবি, লেখক ও শিল্পী বাংলাদেশের পক্ষে বহুমুখী কাজ করেছেন। বোম্বের (বর্তমানে মুম্বাই) বলিউডের চলচ্চিত্র ও সংগীতজগতের অনেক শিল্পী বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেছিলেন, ফান্ড গঠনের উদ্দেশ্যে অনেক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছেন। 

লাতিন আমেরিকার দেশ আর্জেন্টিনায় বাংলাদেশের পক্ষে সংহতি আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন সেদেশের লেখক, শিল্পী ও ধর্মীয় নেতারা। একাত্তরের ১১ জুন তাঁদের একটি প্রতিনিধিদল আর্জেন্টিনার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে একটি স্মারকলিপি পাঠানো হয় বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামীদের জন্য আর্থিক ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সাহায্য পাঠানোর দাবি জানিয়ে। এই  স্মারকলিপিতে স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে প্রথম নামটি ছিলো আশি-ঊর্ধ্ব ভিক্টোরিয়া ওকাম্পোর নাম। যাকে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘বিজয়া’ উপাধি দিয়েছিলেন৷ সেই সাথে ছিলো খ্যাতনামা সাহিত্যিক হোর্হে লুইস বোর্হেসসহ আর্জেন্টিনার প্রথম সারির লেখক ও শিল্পীদের অনেকেই। ভিক্টোরিয়া ওকাম্পো বাংলাদেশের সমর্থনে রাজধানী বুয়েনস এইরেসের একটি মিছিলের নেতৃত্বেও ছিলেন।

ফরাসী আঁদ্রে মালরো, বিশ্বসাহিত্যের অন্যতম এক পুরোধা ব্যক্তিত্ব যিনি আমাদের মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে গর্জে উঠেছিলেন প্রবল বিক্রমে। এমনকি বাংলাদেশের সশস্ত্র যুদ্ধে যোগদানের জন্য তিনি প্রতীকী অঙ্গীকারও ঘোষণা করেছিলেন। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ সরকারের আমন্ত্রণে এদেশ ঘুরে গিয়েছিলেন মঁসিয়ে আঁদ্রে মালরো। সেই ঘোর অমানিশার দিনে তাঁর প্রবল প্রতাপশালী কণ্ঠস্বর আমাদের বিপুল প্রেরণা জুগিয়েছিল।

নিউইয়র্কের ম্যাডিসন স্কয়ার গার্ডেনে ১ আগস্টে অনুষ্ঠিত অবিস্মরণীয় সংগীত অনুষ্ঠানটি ছিলো একাত্তরে বাংলাদেশ নিয়ে গায়ক-শিল্পীদের সবচেয়ে বিশাল সংগঠিত আয়োজন। এই অনুষ্ঠানের মূল উদ্যোক্তা ছিলেন বিশ্ববিখ্যাত সেতারবাদক পণ্ডিত রবিশঙ্কর। বাংলাদেশের জনগণের সাহায্যে কিছু করার জন্য তিনি জনপ্রিয় ব্যান্ড বিটলসের অন্যতম সদস্য জর্জ হ্যারিসনের সঙ্গে সহযোগিতা কামনা করেন।হ্যারিসন তখন এগিয়ে আসেন এবং উদ্যোগী হয়ে অন্যান্য শিল্পীদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। আয়োজিত হয় সেই বিখ্যাত ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’। নিউইয়র্কসহ পুরো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আলোড়িত হয়েছিলো শিল্পীদের এমন মানবিক এই আবেদনে। 

কনসার্ট ফর বাংলাদেশ

বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের মানুষের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতি দৃঢ় সমর্থন জানিয়ে দেয়া পণ্ডিত রবিশঙ্করের একটি সংক্ষিপ্ত বক্তৃতা দিয়ে শুরু হওয়া কনসার্টে নোবেল জয়ী বব ডিলানের সঙ্গে গিটার বাজিয়েছিলেন জর্জ হ্যারিসন, বেজ গিটারে ছিলেন লিওন রাসেল এবং টাম্বুরিন বাজিয়েছেন রিঙ্গো স্টার। এছাড়াওএতে অংশ নিয়েছিলেন ওস্তাদ আলী আকবর খান, ওস্তাদ আল্লা রাখা। পশ্চিমের তারকাদের মধ্যে জর্জ হ্যারিসন ছাড়া ছিলেন রিঙ্গো স্টার, বব ডিলান, এরিক ক্ল্যাপটন, লিওন রাসেল, বিলি প্রেস্টন প্রমুখ। এ অনুষ্ঠানের জন্যই জর্জ হ্যারিসন লিখেছিলেন ‘বাংলাদেশ’ নামে নতুন এক গান। গিটারের পাশাপাশি অন্যান্য আধুনিক বাদ্যযন্ত্রের সম্মিলিত চড়া সুরের মধ্যে আর্তনাদের মতো করুণ সুরের সাথে জর্জ হ্যারিসনের দৃঢ় কণ্ঠে গাওয়া এই গান জনমনে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করেছিলো। তাদের এই মহতী উদ্যোগ এদেশের স্বাধীনতাসংগ্রামের ইতিহাসে সংহতি প্রকাশের ঘটনাবলীর মধ্যে অন্যতম তাৎপর্যপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হওয়ার দাবি রাখে। ৪০ থেকে ৫০ হাজার দর্শনার্থীর এ অনুষ্ঠান থেকে সংগৃহীত হয়েছিল ২ লাখ ৪৩ হাজার ৪১৮ দশমিক ৫০ ডলার।

সেদিনের ম্যাডিসন স্কয়ার গার্ডেনের সংগীত অনুষ্ঠানে যুদ্ধবিরোধী আর মানবতার আন্দোলনের নেত্রী হিসেবে পরিচিত কণ্ঠশিল্পী জোয়ান বায়েজ তার পূর্বনির্ধারিত একটি অনুষ্ঠানের জন্য অংশ নিতে পারেননি। তবে মানবাতাবাদী এই শিল্পীর মনে গভীরভাবে স্পর্শ করেছিল বাংলাদেশে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নিদারুণ হত্যাযজ্ঞ। তিনি লিখেছিলেন এক হৃদয় নিংড়ানো গান, যার শিরোনাম ছিলো—‘বাংলাদেশ’।। ১৯৭১-এ বাংলাদেশের জনগণের ওপর বর্বর হানাদারদের সশস্ত্র আক্রমণ ও নির্মম হত্যাযজ্ঞ দেখে প্রতিবাদী সংগীতশিল্পী জোয়ান বায়েজ লিখেছিলেন ‘দ্য স্টোরি অব বাংলাদেশ’ নামের অমর এক গান। এ গানের সুরকারও তিনি। পরবর্তীকালে তাঁর একাধিক অ্যালবাম বা সিডিতে ‘সং অব বাংলাদেশ’ নামে এই গানটি অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ওপর শোনা গানগুলোর মধ্যে জোয়ান বায়েজের গানটি অন্যতম শ্রেষ্ঠ একটি।

১৯৭১ সালের ১৪ নভেম্বর ইংল্যান্ডের স্যাডলারস ওয়েলস থিয়েটারে বাংলাদেশের শরণার্থীদের জন্য তহবিল সংগ্রহের উদ্দেশ্যে অভিনেত্রী অস্কার বিজয়ী গ্লেন্ডা জ্যাকসন একটি অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেছিলেন। ১৯৭১ সালের ১৪ নভেম্বর লন্ডনের স্যাডলারস ওয়েলস থিয়েটারে ‘কনসার্ট ইন সিমপ্যাথি ১৯৭১’ নামে একটি অনুষ্ঠান হয়। পণ্ডিত রবিশঙ্করের দূরসম্পর্কের ভাইপো বীরেন্দ্রশঙ্করের উদ্যোগে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে গ্লেন্ডা জ্যাকসনের পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গ এবং লন্ডনের আরও অনেক লোকশিল্পী ও যন্ত্রশিল্পী ছিলেন। তবে অবাক করা তথ্য হলো, বাংলাদেশের দুজন লোকসংগীতশিল্পী মোশাদ আলী ও শাহ আলী সরকার সে অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিলেন এবংতাঁরা গানও গেয়েছিলেন। পশ্চিমবঙ্গের বিখ্যাত লোকসংগীতশিল্পী নির্মলেন্দু চৌধুরী, গায়ক সবিতাব্রত দত্ত এবং আমাদের প্রিয় রুমা গুহঠাকুরতা প্রমুখও এই অনুষ্ঠানের অংশ হয়েছিলেন।

আমেরিকান কবি এলেন গিন্সবার্গ ও রাশিয়ান কবি আন্দ্রেই ভজনেসেনস্কি, বিশ্বের দুই প্রধান দেশের দুই কবি এক মঞ্চে উঠেছিলেন শুধুমাত্র বাংলাদেশ প্রশ্নে। বাংলাদেশের পক্ষে জনমত গঠনের উদ্দেশ্যে ১৯৭১ এর ২০ নভেম্বর সন্ধ্যায় নিউইয়র্কের সেইন্ট জর্জ গির্জায় কবিতা পাঠের আসর বসে। তাঁদের সঙ্গে আরও ছিলেন কবি ও লেখক গ্রেগরি করসো, পিটার অরলভস্কি, কেনেথ কচ, এড স্যান্ডার্স প্রমুখ কবি। এই কবিতাপাঠের অনুষ্ঠানটির আয়োজন করেছিল ‘আমেরিকানস ফর বাংলাদেশ’ নামক একটি মানবতাবাদী সংগঠন।  সংস্থাটি বাংলাদেশের পক্ষে জনমত সৃষ্টি ও অর্থ সংগ্রহের লক্ষ্যে কাজ করে গিয়েছে।

কবি অ্যালেন গিন্সবার্গ একাত্তরের সেপ্টেম্বর মাসে বাংলাদেশের লাখো-কোটি মানুষের দুর্দশা স্বচক্ষে দেখতে ভারতে গিয়েছিলেন। তাঁর সেই অভিজ্ঞতা উঠে আসে ‘সেপ্টেম্বর অন যশোর রোড’ নামে তাঁর লেখা একটি কবিতায়। শরনার্থী শিবিরে নিদারুণ দিনাতিপাত করা মানুষদের দুঃখ-বেদনা-লড়াইয়ের কথা উঠে আসে এই কবিতায়।

ইংল্যান্ডের বিখ্যাত দ্য ওভাল স্টেডিয়াম শুধুই একটা স্টেডিয়াম-ই নয়, এর সাথেও জড়িয়ে আছে আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রাম। ১৯৭১ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর ক্রিকেটের জন্য বিখ্যাত এই স্টেডিয়ামে বাংলাদেশের দারিদ্র্যপীড়িত শরণার্থীদের সহায়তায় তহবিল সংগ্রহের জন্য ‘গুডবাই সামার: কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’ নামে একটি বিশাল রক কনসার্ট অনুষ্ঠিত হয়েছিল। বাংলাদেশের জন্য আয়োজিত সেই রক কনসার্টে দর্শকসমাগম হয়েছিল ৩৫ হাজারের মতো। ইংল্যান্ড ও আমেরিকার বিখ্যাত প্রায় ডজনখানেক ব্যান্ড এই রক কনসার্টে অংশ নিয়েছিল। যাদের মধ্যে অন্যতম হলো দ্য হু, দ্য ফেসেস, মট দ্য হুপল, লিন্ডিসফার্ন, কুইনটেসেন্স, অ্যাটমিক রুস্টার, আমেরিকা, দ্য গ্রিস ব্যান্ড ও কোচিস।

এভাবে বাংলাদেশের ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে অবস্থান নিয়েছিলেন পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের খ্যাতনামা কবি, শিল্পী, গায়ক, অভিনেতাসহ অন্যান্য সৃজনশীল মানুষ। বাংলাদেশের মানুষের বীরত্ব ও আত্মত্যাগ অনুপ্রাণিত করেছিল তাঁদের। আমাদের জীবনের সবচেয়ে দুর্যোগপূর্ণ দিনগুলোতে তাঁরা ভালোবাসার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। তাঁদের কথা আমরা কোনো দিন ভুলব না। তাঁদের প্রতি আমরা চিরকৃতজ্ঞ।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *