negative emotions

১০টা নেগেটিভ ইমোশন যা আমাদেরকে পিছনে টেনে ধরে

তুলনা (হিংসা)-

নেগেটিভ ইমোশন বা নেতিবাচক মানসিকতার মাঝে সবচেয়ে বাজে হলো তুলনা করা। কারো সাথে তুলনা করে তার সাকসেসের মধ্যে ছিদ্র খোঁজার মানে হচ্ছে– আপনার যে সামর্থ নাই, আপনার নিজের কোন সফলতা না থাকার মন খারাপকে সাময়িক সান্ত্বনা দেয়া। উনি দুই নাম্বারি করেন, তিনি ছেঁচড়া, তেলবাজ, ক্ষেত-আনসোসাল বলার মানে হচ্ছে— আমি নিজেকে এক নম্বর দাবি করেও তার সাথে নিজেকে দাঁড় করাতে পারি নি বলেই আফসোস করছি। সো দ্য বেস্ট থিং উইল বি, আজকের পর থেকে– অন্যের সাথে তুলনা করতে হলে, তার এফোর্টের সাথে এফোর্টের তুলনা করতে হবে। তার স্ট্রাটেজির সাথে নিজের স্ট্রাটেজির তুলনা করতে হিবে। তার মানে হলো কম্পেয়ার না করে, কমপিট করতে হবে। তবেই নিজেকে ভালো রাখতে হবে।       

পটেনশিয়াল (আমি ডিজার্ভ করি)

দুনিয়ার সবচেয়ে হাস্যকর ও লুজার মার্কা নেগেটিভ ইমোশন হচ্ছে– আমি এর চাইতে ভালো কিছু ডিজার্ভ করি। শুনুন, সত্যি কথা হচ্ছে, আমি যা পেয়েছি সেটাই আমি ডিজার্ভ করি। এখন সেটা কারো ভালো লাগুক বা না লাগুক– সেটা দিয়ে দুনিয়ার কারো তেমন কিচ্ছু যায় আসে না। কারো পটেনশিয়াল কতটুকু আছে বা সে কি ডিজার্ভ করে সেটা নিয়ে দুই মিনিটেরও বেশি চিন্তা করা উচিৎ না । আপনার কোন কিছু না হলে, কোন কিছুর পিছনে চেষ্টা করে না পেলে– পরেরবার ট্রাই করে দেখা উচিৎ। ডিজার্ভ করি বলে, আজীবনের জন্য লুজার পজিশনকে নিজের রিজার্ভ বেঞ্চ বানিয়ে বসে থেকে ‘আমি এরচেয়েও ভালো কিছু ডিজার্ভ করি’ মার্কা কথা বলে নিজের বর্তমান পজিশনকে ছোট করে আত্মশ্লাঘা অনুভব করার মতো বোকামি আর নেই।   

একাকীত্ব গ্রাস করে ভয়ংকরভাবে

কেউ আমাকে দেখতে পারে না (লোনলি)

কারো বন্ধুর সংখ্যা কমে যাওয়ার দুইটা মানে হতে পারে। এক, হতে পারে সে তার টার্গেটে পৌঁছাতে, নিজেকে ডেভেলপ করতে এতোটাই ব্যস্ত, এতো ব্যস্ত যে– আশেপাশের কারো পিছনে ফাও সময় দেয়ার মতো সময় তার হাতে নাই। আর বন্ধুর সংখ্যা কমে যাওয়ার আরেকটা মানে হচ্ছে– আপনি কারো সাথেই মিশতে চান না। বা যাদের সাথে মিশতে গিয়েছেন তারা আপনার টাইপের মানুষ না। সো, চারজন নেগেটিভ ফ্রেন্ড থাকার চাইতে, ফ্রেন্ডহীন ভাবে বাসায় বসে ইউটিউব এ স্কিল ডেভেলপ এর ভিডিও দেখা অনেক ভালো। আমার কোন বন্ধু নেই বলে হাহাকার করে নিজের ভাগের সময় ধ্বংস করা ছাড়া কিছুই হয় না।

ঘৃণা (হেটার্স)

হেটার্স নিয়ে একটা সিম্পল রুল হলো–- আপনি বেঁচে থাকলে আপনার হেটার্স থাকবেই। যেমন ধরুন, আপনি যদি এই মুহূর্তে ইউটিউবে কোন ভালো ভিডিও খুজতে গিয়েছেন। নিশ্চিত থাকুন যতই ভালো বা চমৎকার ভিডিও খুঁজে পান না কেন যদি ভিডিওতে ১০০০ এর বেশি লাইকও থাকে তবুও সেখানে অন্তত একটা হলেও ডিজলাইক খুঁজে পাবেন। সো, এটা প্রমাণিত যে হেটার্স আর ডিজলাইক লাইফেরই একটা অংশ। আপনাকে যেটা করতে হবে–সেটা হচ্ছে আপনি যদি দেখেন, আপনার হেটার্স ১০% এর কম হয় তাহলে ওদের ইগনোর করুন। যদি ২৫% এর মতো হয় তাহলে যা করছেন তা আরেকটু ভেবে দেখা উচিৎ। আর যদি হেটার্স ৫০% বা তার বেশি হয়, তাহলে আপনি অবশ্যই কিছু একটা ভুল করতেছেন। সো ট্রাই টু চেইঞ্জ সামথিং ইন ইউর ওয়ে অফ লাইফ।

ইগো (আমিই সেরা)

ইগো, আত্মঅহংকার, সুপিয়রিটি কমপ্লেক্স আপনার চারপাশে কঠিন দেয়াল তৈরি করে দেয়। কারো ইগো যত বেশি হবে, অন্যদের কাছে থেকে শিখা ততো কঠিন হবে। অন্য কারো থেকে তত বেশি পিছিয়ে পড়বে। আপনি এক সময় কোন ইউনিভার্সিটিতে পড়েছিলেন, কিসব দামি খাবার খেয়েছেন, পরীক্ষায় কত ভালো রেজাল্ট করছিলেন, বাপের টাকা কত ছিলো, এগুলা আজীবন গোনার টাইম বা সবাইকে চেচিয়ে শোনানোর টাইম আপনাত থাকলেও দুনিয়ার অন্য কারো সেটা পাত্তা দেবার টাইম নাও থাকতে পারে। সো, ইগো-র মুখোশ ছেড়ে একজন বিনয়ী, নম্র, ভদ্র মানুষ হওয়ার চেষ্টা করলেই লাইফ অনেক সহজ ও মজার হয়ে উঠবে।      

অজুহাত (কমপ্লেইন)

একটা কথা আছে– Don’t be the problem. Be the solution. সো, এই জিনিস কাজ হচ্ছে না। ওই ভাবে করলে হবে না। সে কেন আমার দিকে তাকালো না? তার নাক ব্যাঁকা কেন? রাস্তার পাশে বৃক্ষ কেন? বৃক্ষের গোড়ায় শিকড় কেন? শিকড়গুলা চিকন কেন? এমন শত শত কমপ্লেইন করে খুব বেশি চেইঞ্জ করতে পারবেন না। বরং আপনার নিজের ভিতরেই অশান্তি বাড়বে। তাই সমস্যার সাইডে না দাঁড়িয়ে, সমাধানের সাইডে চলে যাওয়া বুদ্ধিমানের কাজ। আচ্ছা, এইভাবে কাজ হচ্ছে না। তাহলে আমি এইভাবে ঘুরিয়ে দিলাম। এই ঘরটা সবসময় কেন ময়লা থাকে– আচ্ছা আমি পরিষ্কার করে দিলাম। ও এইখানে সবসময় ক্যাচাল করে। আচ্ছা, সেই সময় আমি ঐখানে গেলাম না। এটাই হওয়া উচিৎ আমাদের ব্যক্তিত্বের প্রকাশের উপলক্ষ। 

রাগ আমাদের হারিয়ে দেয়

রাগ (মেজাজ খারাপ)

রাগ দেখানো বা মেজাজ খারাপ করা বোকা মানুষের কাজ। রেগে যাওয়ার মানে হচ্ছে, আপনি আপনার চিন্তা করার এবিলিটি ফ্রিজ করে দিলেন। দুনিয়াতে যত জ্ঞানী আর বিচক্ষণ ব্যক্তি আছেন তাদের বড় গুণ হলো উনারা রেগে যান না, উনারা রাগের মাথায় কোন কাজ করেন না। কেননা উনারা ভালো করেই জানেন রেগে গিয়ে সবচেয়ে স্মার্ট চাল দেয়া যায় না। বরং মাথা কুল রেখেই আসল গুটির চাল দিতে হয়। সো, আপনি মাথা গরম করে, দশ মিনিট চিল্লা চিল্লি করে সাময়িক এটেনশন পেতে পারেন কিন্তু বোর্ডের শেষ দানটা কিন্তু মাথা ঠান্ডাওয়ালা ব্যক্তিটাই খেলবে। সেজন্যই তো কথায় বলে– রেগে গেলেন তো হেরে গেলেন।  

ভয় (কনফিউশন)

কোন কিছুতে ভয়, সংশয় বা কনফিউশন থাকার মানে হচ্ছে আপনি রেডি নন। কনফিডেন্ট নন। পরীক্ষায় পাশ করবে কি, করবে না সেটা নিয়ে ভয় পাওয়ার কারণ হচ্ছে আপনি সঠিক পরিমাণ প্রিপারেশন নিতে পারেন নি। পাশ করার পর চাকরি পাবেন, নাকি পাবেন না সেটা নিয়ে কনফিউশনের কারণ হচ্ছে– আপনি স্কিল ডেভেলপমেন্ট, ইন্টারভিউ প্রিপারেশন, ক্লাসের পড়া, ইংরেজি দক্ষতার পিছনে পর্যাপ্ত এফোর্ট দেন নাই। এখন কনফিউশনের চাদর দিয়ে ল্যাকিংস গর্ত ঢাকার চেষ্টা করতেছেন। তাই ভয় যত বেশি পাবেন প্রিপারেশন নেয়ার পরিমাণ তত বাড়িয়ে দিতে হবে।  দেখবেন ভয় নিজেই উল্টা পথ ধরেছে। 

মন খারাপ (ভাল্লাগে না)

ও কেন চলে গেছে? আমার কোন জিনিসে কমতি ছিলো? বা আমার সাথেই বা এমন কেন হলো। এইগুলার উত্তর হচ্ছে– আপনি আমি যারা এইসব ফালতু ভাবনা ভাবার টাইম পাই তারা সিম্পলি একটা গাধা। এজন্যই সে চলে গেছে। কারণ যে গাধাকে তিনমাস ধরে ইগনোর করছে। এর মধ্যে দুইবার ব্লক মারছে। তারপরেও সে বুঝে নাই। আর এখন যখন ডাইরেক্ট “না” বলে দিয়ে চলে গেছে। তাতেও সে ভুলতে পারতেছে না। প্যানপ্যান করেই যাচ্ছে। তাই তাকে ছেড়ে দিয়ে চলে গেছে। গেট ওভার ইট। ডু সামথিং নিউ। জীবন পিছনে ফিরে তাকানোর জন্য না। সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য।  

প্রোকাস্টিনেশন (ঢিলামি)

মনে রাখবে, ঢিলামি করার সহজ উপায় হচ্ছে রুটিন বানানো, প্ল্যান সেট করা, নোটপত্র জোগাড় করার নামে আরো এক সপ্তাহ সময় নষ্ট করা। সো, প্লানের নামে প্রোকাস্টিনেশন করতে যাওয়া যাবে না। হুদাই টাইম নষ্ট করার মতো টাইম কই পান আপনারা। আপনার যদি সত্যিই কাজটা করার ইচ্ছা থাকে। তাহলে আজকেই করে ফেলুন। দরকার হলে পুরা কাজটার মধ্যে আজকে যতটুকু করতে পারবেন ততটুকু করে ফেলুন। তারপরেও আজকেই শুরু করতে হবে।

সবশেষে আপনি যা হতে চান তার জন্য ইতিবাচক চিন্তা আর মানসিকতা ধারণ করতে হবে, তাতে আর কিছু না হোক আপনার সময়টা ইউটিলাইজ করে অর্জনের খাতায় অনেক কিছুই লিখে নেয়া সম্ভব। তাই দেরি না করেই শুরু করুন নিজেকে পরিবর্তন করার মিশন। নিজের ব্যক্তিত্ব উন্নত করতে ইতিবাচক মানসিকতা গঠন করুন, জীবনটাকে উন্নত করার সুযোগ নিন। সবার জন্য আন্তরিক শুভকামনা ও ভালবাসা। 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *