নির্বোধ স্বস্তিকা

শরৎ প্যাগোডার শিখরে শুভ্রতা ছড়িয়ে দিতেই ফুটেছিলো শিউলিরা,
এরপর থেকে বুকের ২৪ টি হাড়ে বাসা গেড়ে আমাকেও তার বাসিন্দা করে নিলো,
অথচ বকুল আমার এক অপ্রিয় প্রিয়তমা, যার ঝরে যাওয়া স্বভাবটা মেনে নিতে না পারলেও দেখে যেতে হয়!
তবুও বকুল তলে শুয়ে থাকা স্বভাব পাওয়া মেহবুব তো ফুলের চেয়ে গাছকেই ধারন করার মোহে লেপ্টে থাকে তোমার পবিত্র জমিনে।

তোমার উত্তর-দক্ষিণ নিটোল বৃন্তে ফুটা রক্তজবা
কেমন যেন আমার রক্তজল শুষে নেয়া বন্ধ করে দিয়ে ফ্যাকাসে হয়ে যাচ্ছে আজকাল।
উপবাস, নির্ঘুম শুয়ে থাকা বকুলের সন্ধানে ভবানীপ্রসাদ হয়েও
যখন বকুল শিকড় তার পাততাড়ি গুটিয়ে নেয়ার নাম করে
ছায়া সরিয়ে নিতে গিয়েও কিছুটা বকুল ঝরিয়ে বুঝিয়ে দেয় শিকড় গেলে যাক ডালপালা তো থাকছে

শুভ্র চাদরটি তুষারের কুঁচিতে গায়ের উপর লেপ্টে দিতে;
দুর্বল ভবানী ভাড়ে শূন্য বলেই কি না ঘাড় ঘুরিয়ে তাকিয়ে বলে,
তোমার ছায়া সরে গেলে রৌদ্র আমাকে নিঃশেষ করে দিবে,
তোমার মূলের খনি চাই কি না সেটা তুমিই জানো, তবে বকুল মূলের খনিজ ছাড়া আমি এই ঘাসেই মিটে যাবো,
মাটি মিটিয়ে নেবে তার হিসাব আমার চামড়ায়, তোমার নিরুপায় হাসিতে কেপে উঠা দক্ষিণ পক্ষের বৃন্ত হতে
চুয়ে পড়া সাদা বকুল লেপে দিলো ঘাড়ের জমিন, দৃষ্টি নামিয়ে ঘাসের বুকে ঢেলে গেলাম নির্বীজ মাধুকী।


ওপারে মসজিদে উপবাসের ঢাক বেজে উঠতেই কান খাড়া করলাম,
জিভ বারবার বেড়িয়ে যাচ্ছে, ক্ষুধার্ত বলদ হয়েও হাল টেনে নেয়ার সময় জিহবা বের করে কি না জানি না।
কিন্তু এ যে কয়েক কোটি বছরের ক্ষুধা, হয়তো এজন্যই নির্লজ্জ জিভেজল আসে মুয়াজ্জিনের ডাকে।

চোখ তুলে তাকিয়েই বোধ করলাম সব বকুল হারিয়ে রক্তজবার বৃন্তেরা কেমন কালছে হয়ে আমাকে উপহাস করছে।
জিজ্ঞাসিত চোখ দেখে বলে দিলে হানা দিয়েছিলো জ্ঞাতিকুল অর্পিত হাড়গিলাটি,
চেপে ধরা শকুনের ডানা ঝাপটানোতে ঝরেছে শাহী শুভ্রতা,
শরীর ঢেকে আছে সমস্ত বকুল বুকফাটা স্বজনহীনতার আর্তি হয়ে,
ফ্যাকাসে হয়ে গেছে রক্তজবার কোহ-ই-নূর।


ফেটে পড়া আক্রোশে নিজের কান চেপে ধরতে যেয়েই বোধ করলাম হস্ত কর্ণের ঠিকা স্থানচ্যুত
নির্বোধ চোখে স্বস্তিকা কাপিয়ে শুভ্র বকুলেরা আঁশ হয়ে
পুরো শরীর ঢেকে দিলো আর কপালমধ্য ঠিকরে আসে মণি হওয়া রক্তজবার অঞ্জলি।

তোমার প্যাগোডায় আজ থেকে শিউলি ফুল ভোর আনবে,
কোন হাড়গিলার বিষে নীলকণ্ঠ হবে না তোমার শরৎ শুভ্র শ্বাসনালী!!

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *