self realization

উপলব্ধি ও আত্মোপলব্ধির সম্বাদ!

Natural Equilibrium তত্ত্ব অনুযায়ী আপনার পকেটে যদি অনেক টাকা থাকে তাহলে অবশ্যই পৃথিবীর অন্য প্রান্তে কারো পকেটে ফুটো কড়িটাও নেই। অর্থ্যাৎ প্রকৃতি ব্যালেন্স করে নেয় তার মতো করে। এটা অনেকটা বাটারফ্লাই ইফেক্ট তত্ত্বের মতোই। আরেকটু সহজ করে বললে ধরুন সিলেটে বৃষ্টি হলো যার ফলে বগুড়ার দইয়ের স্বাদটা বেড়ে গেলো। আপাত দৃষ্টিতে এই দুইটার কোন যোগসুত্র না থাকলেও এটাই বাটারফ্লাই ইফেক্ট যেখানে প্রায় অসম্ভব ঘটনাও পরস্পর সম্পর্কযুক্ত হয়ে যায় যা সাধারণ হিসাবে আমাদের চিন্তায় আসে না বা আমরা এতোসব নিয়ে ভাবতে বয়েই গেছে ভাব নিয়ে নিজেদের কাজ করতে থাকি। এবার আসুন প্রথম তত্ত্বে ফিরে যাই, প্রাকৃতিক সাম্য আবার একই সাথে নাও ঘটতে পারে। ধরুন আজ আপনি আপনার পছন্দের কাচ্চি খেয়ে এক গেলাস বোরহানি খেয়ে ঢেকুর তুলে বিল দিয়ে বেরিয়ে গেলেন। দুদিন পর বাড়ি থেকে বের হবার পথে দেখলেন সিটি করপোরেশনের নর্দমায় খাবার খুজছে কেউ। আপনি নাকে হাত দিয়ে এগুচ্ছেন আর ভাবছেন মানুষ কত কষ্ট করে বেড়াচ্ছে দুমুঠো খাবারের জন্য। আপনার ঘূর্ণাক্ষরেও মনে হয় নি আপনার কাচ্চি খাওয়ার জোগান দিতে গিয়েই তার পেটে খাবার নেই। নিশ্চয়ই পড়ছেন আর গালাগাল দিচ্ছেন যে বেটায় কয় কি, আমার পকেট থেকে বিল দিলাম আর উনি বলেন আমার কাচ্চি খাওয়ার জন্য নাকি অই বেটা নর্দমায় খাবার খুজে। এই যে আমরা নিজেদের নিয়ে ভাবি বা নিজেদের অগ্রাধিকার দিতে গিয়ে আমাদের পৃথিবীতে আমি ছাড়া আর কোন হোমো সেপিয়েন্স আছে কি না সেটা ভুলে যাই, এই ভুলে যাওয়া রোগ থেকে আমাদের ফেরত আনতেই প্রকৃতি আজ গুণ্ডামি করছে। এই তো কয়দিন আগেই পেয়াজ কান্ড, লবণ কান্ড হলো। গুজব শুনেই বস্তা বস্তা লবণ আর পেয়াজ দিয়ে খাটের তলা ভরে রাখলাম, আমার প্রতিবেশীর কথা ভাবলাম না। সোস্যাল চেইনটা ধরে টান দিয়ে সোস্যাল ট্রেনটা থমকে দিলাম। আবার এখন দেখুন, এই মহামারীর সময়ে আমরা চিকিৎসা পণ্য নিয়েও ব্যবসায় করছি। বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করছি। আশার কথা হলো এতোসব কাজের মধ্যেও ভালো কাজ হচ্ছে৷ ভালো মানুষেরা প্রমান করছেন তারা শুধুই হোমো সেপিয়েন্স নয়, তারা হিউম্যানও বটে।
কিন্তু মজার ব্যাপারটা কি জানেন? প্রকৃতি গুন্ডামী করছে ঠিকই কিন্তু আমাদের সাথে পারছে না। এই জগত সংসারে আমরা সবচেয়ে আলাদা কর্ডেট, আমাদের মেরুদণ্ডটা আলাদা কোন মেকানিজম দিয়ে তৈরি(আমার কাছে মনে হয়), তা না হলে এমন মানবিক বিপর্যয়ের সময়ে একটা জাতি এতোটা লোভী আর আত্মকেন্দ্রিক কিভাবে হতে পারে বলুন তো?(আমার মতো সুযোগের অভাবে অনেকে আবার নিজেদের সততার আবরণে ঢেকে রেখেছে, অবশ্য কিছু হাতে গোণা অতীব ভালো মানুষ এখনো এই জাতিকে কলুর বলদের মতো টেনে যাচ্ছেন বলেই সাধারণ মানুষ এখনো ফোটায় ফোটায় তেল পেয়ে যাচ্ছেন)।

আত্মোন্নয়ন

এতো কিছু বলার মূল উদ্দেশ্য হলো আমরা সাংস্কৃতিক বৈকল্য থেকে মুক্তি পাবো কবে বলুন তো?? এই একবিংশ শতাব্দীতে এসেও যখন সবখানেই অন্ধের মতো নিজেকে বড় প্রমানের একটা পরোক্ষ প্রতিযোগিতা দেখা যায় সেটা কবে বন্ধ হবে? এই করোনা নিয়ে কত মানুষ কতভাবেই না পন্ডিতি করেছেন এবং করছেন( মাশাল্লাহ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও এই দলে আছে বলে ট্রাম্পের মতো আমিও বিশ্বাস করি) তার কোন হিসাব নেই। এমনো দেখেছি কোন একটা ফলের পিএইচ রেঞ্জ ২১ এ নিয়ে গিয়েছে অথচ আমি জানতাম পিএইচ এর শেষ মান ১৪ যাই হোক এমন সব পন্ডিতে ভরা এই দেশে সত্যিকারের Wiseman এর বড্ড অভাব। প্রফেসর আবদুর রাজ্জাক, শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন, ড. কুদরত এ খুদা, অধ্যাপক  আহমেদ শরীফ, আহমেদ ছফা, এমন আরো অনেকেই ছিলেন সমসাময়িক যারা সত্যিকার অর্থেই wiseman ছিলেন। এখন এমনটা আসে না কেন? কি হয়েছে এই পোড়া দেশের মাটির?  কেন এমন অনুর্বর হয়ে গেছে খাটি সোনার চাইতে খাটি আমার এই দেশের মাটির? আসল দোষটা হলো আমাদের সাংস্কৃতিক শুন্যতা তৈরি হয়ে যাচ্ছে, শুন্যের আকারটা এখনো ছোট তবে সেটা বিশাল আকার নিতে সময় লাগবে বলে মনে হচ্ছে না। যেভাবে মানবিক গুণাবলীর বাজারে ধ্বস নামছে তাতে করে শুন্যটা না মহাশুন্য হয়ে যায়।
তবে সাংস্কৃতিক এই শূণ্যতা দুর করনে সবচেয়ে বড় উপাদান হলো আত্মো-উপলব্দি, আমাদের নিজেদের সাংস্কৃতিক মূল্যবোধকে জাগিয়ে তুলতে পারলেই সামাজিক এই অস্থিরতা থেকে জাতিও মুক্তি পায় সমাজও তার শৃঙ্খলা ফিরে পায়।

আবারো ফিরে যাই Natural Equilibrium তত্ত্বে, আমরা যতই খারাপ বা মোটা চামড়ার অধিকারী হই না কেন, প্রকৃতি ছাড় দিবে না, কোনভাবেই না। হয়তো তীর এখনো লাগে নি, তবে নিশানা লিখে তীর ছোড়া হয়ে আছে। হিসাবমতো টার্গেট ঠিকই বধ হবে(বেশ কিছু নাম কুপোকাত হয়েও গেছে, যাচ্ছে)। তবে ইতিহাসের শিক্ষার মতো আমরা প্রকৃতির বিচার থেকেও শিক্ষা নেই না এটাই বড় পাপ আমাদের। আর এজন্যই আমাদের আকাশ ভরা তারা! 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *