Rivaldo

রিভালদো: খলনায়ক থেকে মহানায়ক

দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের সর্ববৃহৎ দেশ ব্রাজিল। আটলান্টিক মহাসাগর দ্বারা পরিবেষ্টিত মিশ্র সংস্কৃতির এই দেশটির ‘‘ক্রাইস্ট দ্যা রিডিমার’’ বা ‘‘স্ট্যাচু অব খ্রিষ্ট রেডিমাস’’ বিশ্বের অষ্টার্শ্চের একটি। এর বাহিরে ব্রাজিল বিখ্যাত ফুটবলের তীর্থভূমি হিসেবে। কথায় আছে-‘‘The English invented soccer, but the Brazilians perfected it.’’ এই কথাটির ভাবার্থ বুঝতে হলে ফুটবল মাঠে ব্রাজিলিয়ানদের খেলা দেখাই যথেষ্ট। সাম্বা ফুটবলের ধারক ও বাহকদের খেলা চোখের প্রশান্তি এঁকে দেয়। ফুটবলটা যদি একটা শিল্প হয় তাহলে তার  অনেক নিখুঁত শিল্পী উপহার দিয়েছে ব্রাজিল। সাম্বা ফুটবলের এমন একজন শিল্পী হলেন রিভালদো ভিতোর বোরবা ফেরেইরা।

রিভালদোর স্বপ্ন দেখা

বাড়ি থেকে অনতিদূরেই ব্রাজিলের উত্তর-পূর্বের শহর রেসিফের কুখ্যাত বস্তির অবস্থান। আর ব্রাজিলের বস্তিগুলোতে পুলিশের রেইড, গোলাগুলি, দাঙ্গা-হাঙ্গামা ইত্যাদি খুবই স্বাভাবিক ঘটনা ছিল। ‍‍এছাড়াও বস্তির রাস্তায় বের হলেই যেকোনো দুই দলের মধ্যে দাঙ্গার ঘটনা চোখে পড়া খুবই সাধারণ ছিল। সেই দাঙ্গার মাঝে পড়ে প্রাণ গিয়েছে কতো লোকের কিংবা কতজন যে কতবার প্রাণ সংশয় পড়েছে তার হিসাব নেই। পরিবারে হাজারো সমস্যা আর এমন অশান্ত পরিবেশের সাথে মানিয়ে নিয়েই বেড়ে উঠেছিলেন রিভালদো। ব্রাজিলের আর দশটা দরিদ্র পরিবারের সন্তানের মতো রিভালদোকেও চরম আর্থিক দুরবস্থার সম্মুখীন হতে হয়েছিল। তার উপর মাত্র পনেরো বছর বয়সেই তিনি বাবাকে হারিয়ে অনেকটা নিঃস্ব হয়ে পড়েন রিভালদো। রেসিফের নোংরা-অস্বাস্থ্যকর বস্তি, বস্তিতে পুলিশের রেইড, গোলাগুলি, দাঙ্গা-হাঙ্গামার মাঝে বেড়ে ওঠা এক কিশোর যে কিনা রাস্তায় বের হলেই দেখতো গুম, খুন, হত্যা। লাশের গন্ধ ভেসে আসতো নাকে। এছাড়াও যেখানে ছিলো নেশাখোরদের আনাগোনা এবং দাঙ্গা-হাঙ্গামা। তার উপর অভাব-অনটনের সংসারে পিতার মৃত্যু। এমন বিরূপ পরিবেশে বেড়ে উঠার একটাই গন্তব্য হতে পারতো রিভালদোর জন্য, সেটা ব্রাজিলের আর দশটা বালকের মতোই একসময় কোনো এক দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসীর নাম হতে পারতো রিভালদো। যে কিনা হাতে হাতে অস্ত্র নিয়ে ঘুরে বেড়াতো রেসিফের বস্তিতে। অথবা হতে পারতো কোনো এক কুখ্যাত ড্রাগ মাফিয়া যে কিনা নেশার আসরে বুদ থেকে সবাইকে নেশার দুনিয়ায় ডেকে আনতো।

রিভালদো ফেরেরা

কিন্তু এই রিভালদো তো অন্য ধাতুতে গড়া, তাই তো তিনি বেছে নিয়েছিলেন ফুটবল নামক কঠিন রাস্তাটি। ফুটবলার হয়ে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়ে নিজেকে পৌঁছে দিতে চেয়েছিলেন যে অমরত্বের দিকে। অমরত্বের প্রত্যাশায় রিভালদো কুখ্যাত অপরাধী না হয়ে ফুটবলার হবার পণ করে এগিয়ে গিয়েছেন আপন পায়ে।  

বাল্যকাল থেকেই সমুদ্র সৈকতে পানি বিক্রি করে তিনি তার পরিবারকে সহায়তা করতেন। আর তার বাবার মৃত্যুর পর সংসারের ভরণ পোষণে নিজের দায়িত্বটা বেড়ে যায় রিভালদোর। পরিবারের সদস্যদের মুখে দুবেলা দুমুঠো অন্ন তুলে দিতে রিভালদো ফেরিওয়ালার কাজ শুরু করেন। এদিকে নিজেও নানান ধরনের অপুষ্টির শিকার হওয়ায় তার শারীরিক অবস্থা ছিলো তার খুবই খারাপ। হালকা পাতলা রিভালদো অপুষ্টিতে ভুগে দুটি দাতও হারিয়েছিলেন। এই অবস্থায় একটা ছেলের পক্ষে আদৌ কি ফুটবলার হওয়া সম্ভব? কল্পনায় যা-ই ভাবেন না কেন, এমন রোগা আর অপুষ্টিতে ভোগা একটা ছেলে ফুটবলের শীর্ষপর্যায়ে পৌঁছে যাবে আবার বিশ্বকাপের মতো আসরে আলো ছড়াবে সেটা ওই বয়সে সে নিজেও কি ভেবেছিলেন? তিনি রিভালদো বলেই হয়তো পেরেছিলেন। চিরকালের সংগ্রামী আর যোদ্ধা এই রিভালদো নিজের প্রতিজ্ঞাকে সম্মান দিয়েছিলেন নিষ্ঠা, একাগ্রতা আর অসীম ধৈর্য ও সাহসের সম্মিলিত প্রচেষ্টায়।

এই রোগা-পাতলা শরীর নিয়ে সারাদিন পরিশ্রমের শেষে খাটা ১০-১২ মাইল পায়ে হেঁটে ফুটবল অনুশীলনে যেতেন রিভালদো। অনুশীলন শেষেই আবার কাজে লেগে পড়তেন তিনি। বাবার মৃত্যুর পর কয়েক বছর এভাবেই কাজের ফাঁকে নিজের ফুটবলার হবার স্বপ্নটাকে জিইয়ে রেখে এগিয়ে চলছিলেন আপন পথে। এভাবেই একদিজ স্থানীয় সান্তা ক্রুজ নামক একটি ক্লাবের নজরে আসেন রিভালদো। কিন্তু ক্লাবের মেডিকেল এবং ফিটনেস টিম তাকে দলে নিতে অপারগতা প্রকাশ করেছিলেন কিন্তু শেষ পর্যন্ত তার ফুটবল প্রতিভায় মুগ্ধ হয়ে তাকে দলে সাক্ষর করায় তারা। সান্তা ক্রুজ- এ প্রথম মৌসুমেই ১৪ গোল করে স্বপ্নের শুরুটাও করেছিলেন দুর্দান্ত। তবে তার দুর্বল শারিরীক গঠনের কথা ভেবে তারা তাঁকে পরবর্তী সিজনের জন্য আর বিবেচনায় রাখেন নি৷ হতাশ রিভালদো তখন মরিয়া হয়ে নিজের ফুটবলার হবার আশাটা বাঁচিয়ে রাখতে চেয়েছেন। তাই অনেক চেষ্টা করে যোগ দিলেন মগি মিরিম নামক এক অখ্যাত ক্লাবে। এরপর শুরু হলো রিভালদোর স্বপ্ন পূরণের পালা। মগি মিরিমে থাকাকালীন রিভালদো ব্রাজিলের বিখ্যাত ক্লাব করিন্থিয়ান্স এর এক ক্লাব কর্মকর্তার নজরে পড়ে যান। যার ফলশ্রুতিতে ১৯৯৩ সালে করিন্থিয়ান্স তাকে লোনে সাক্ষর করায়। সেখানে ৩০ ম্যাচে রিভালদো ১১ টি গোল করেন এবং বড় ম্যাচগুলোতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। করিন্থিয়ান্স এ এমন দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের কারণে তারা তাকে রেখে দিতে চাইলেও তাদের রাইভাল ক্লাব পালমেইরাস তাকে মগি মিরিম থেকে কিনে নেয়। পালমেইরাসে পা রাখার পর থেকেই রিভালদোর নাম ডাক সারা ব্রাজিলে ছড়িয়ে পড়ে। পালমেইরাসে দুই সিজনে ৪৫ ম্যাচে ২১ গোল করে দলকে লিগ টাইটেল এবং ব্রাজিলিয়ান পাউলিস্তা শিরোপা সহ ৩ টি শিরোপা জেতান। সেই দুই সিজনেই ব্রাজিলের একটি বিখ্যাত স্পোর্টস ম্যাগাজিন কর্তৃক ‘‘Bola de Ouro’’ পুরস্কার জিতেন রিভালদো, যা মূলত নির্দিষ্ট পজিশনে লিগের সেরা খেলোয়াড়কে দেওয়া হয়। ততোদিনে রিভালদোর ফুটবল প্রতিভা ইউরোপের ক্লাবগুলোকে তার প্রতি আকৃষ্ট করতে বাধ্য করে। 

স্বপ্নেরা মেললো ডানা

১৯৯৬ সালে স্প্যানিশ ক্লাব দেপোর্তিভো-তে যোগ দেন রিভালদো। ইউরোপে নিজের প্রথম মৌসুমেই ২১ গোল করে আলোড়ন সৃষ্টি করেন তিনি ( লিগের ৪র্থ সর্বোচ্চ স্কোরার)। সেই সিজনে তার দুর্দান্ত পার্ফম্যান্সে ভর করে দেপোর্তিবো লি-লিগায় চতুর্থ স্থান অর্জন করে। দেপোর্তিবো-তে এমন দুর্দান্ত পার্ফম্যান্সের সুবাদে ১৯৯৭ সালে ২৬ মিলিয়ন পাউন্ডের বিনিময়ে তাকে দলে ভেড়ায় স্প্যানিশ জয়ান্ট বার্সেলোনা। বার্সেলোনাতে নিজের প্রথম সিজনেই ভ্যান হালের অধীনে ৩৪ ম্যাচে ১৯ গোল করে বার্সেলোনাকে চার বছর বাদে লা লিগা ও কোপা দেল রে জেতাতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন তিনি। সেই সিজনে তিনি লিগের সেকেন্ড টপ স্কোরার ছিলেন রিভালদো এবং দলের সবচেয়ে ধারাবাহিক পার্ফমার ছিলেন তিনিই। একজন প্রথাগত স্ট্রাইকার না হয়েও ১৯ গোল করা চট্টেখানি কথা নয়। এরপর ১৯৯৮-১৯৯৯ সিজনে ২৪ গোল করে আবারো বার্সেলোনাকে লিগ টাইটেল এনে দেন রিভালদো।

এবারও লিগের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতা তিনি। ক্লাব এবং ন্যাশনালে ক্রমাগত সাফল্য এবং দুর্দান্ত পার্ফম্যান্সের ফলে জিদান এবং ব্যাকহামকে পেছনে ফেলে ফিফা বর্ষসেরা পুরস্কার ও ব্যালন ডিওর ও জিতে নেন তিনি। ২০০০-২০০১ সিজনে ২৩ গোল করে লিগের আবারো দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতা হন রিভালদো। এরপরই বার্সেলোনা কোচ ভ্যান গালের সাথে নিজের পজিশন নিয়ে তার মনোমালিন্য শুরু হয়। ভ্যান গাল চাইতেন তিনি যেন একদম লেফট উইং ঘেঁষে খেলেন। কিন্তু রিভালদো চাইলেন নাম্বার টেন বা সেকেন্ড স্ট্রাইকার হিসেবে খেলতে। মনোমালিন্য নিয়েও সেবার ১০ গোল করেন রিভালদো। সেই সিজনেই ভ্যান গালকে স্যাক করে বার্সেলোনা। বার্সেলোনার নতুন কোচ তাকে তার প্রিয় পজিশনে খেলতে দেন। ফলাফল হিসেবে রিভালদোকে সবচেয়ে ভয়ংকর রূপে দেখা যায়। সেবার প্লেমেকার হয়েও ৩৬ গোল করেন তিনি। কিন্তু গোল সংখ্যায় রিভালদোর বেশ উন্নতি হলেও দল হিসেবে বার্সেলোনার অবনতি শুরু হয়। সেবার লিগে ৫ম স্থানে থেকে শেষ ম্যাচ খেলতে যায় বার্সেলোনা। শেষ ম্যাচ ভ্যালেন্সিয়ার সাথে, যারা বার্সেলোনা থেকে ৩ পয়েন্ট এগিয়ে চতুর্থ স্থানে। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে খেলতে হলে বার্সেলোনার জয়ের বিকল্প নেই। স্প্যানিশ লিগের সেরা ডিফেন্স তখন ভ্যালেন্সিয়ার। বার্সেলোনার তাই জেতা খুব মুশকিল। কিন্তু আপনার দলে যখন একজন রিভালদো থাকবে তখন অনেক কঠিন কাজও সহজ হয়ে যাবে। ম্যাচ শুরুর কিছুক্ষণ পরই ফ্রি-কিক থেকে দুর্দান্ত এক গোল করে বার্সেলোনাকে লিড এনে দেন রিভালদো। কিছুক্ষণ পরই সমতায় ফিরে ভ্যালেন্সিয়া। এরপর লং রেঞ্জ শুটে আরো একটি গোল করে আরো একবার বার্সেলোনাকে লিড এনে দিলেও বার্সেলোনা সেই লিড বেশিক্ষণ ধরে রাখতে পারে নি। আবারো সমতায় ফেরে ভ্যালেন্সিয়া। ম্যাচ শেষ হতে আর মাত্র দেড় মিনিটের মতো বাকি। ডি-বক্সের বাইরে একটি বল বুক দিয়ে রিসিভ করে ওভারহেড কিকে বার্সেলোনার ইতিহাসেরই অন্যতম সেরা এক গোল করে নিজের ব্যক্তিগত হ্যাট্রিক করে পয়েন্ট টেবিলের চতুর্থ স্থান নিশ্চিত করেন রিভালদো। ফলে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে খেলতে আর কোনো বাধা রইলো না বার্সেলোনার। দলের এমন বেহাল দশায় ভ্যান গালকে আবারো বার্সেলোনায় ডাগ আউটে ফিরিয়ে আনার সাথে সাথে রিভালদোর বার্সেলোনা ক্যারিয়ারেরও পরিসমাপ্তি ঘটে। 

এরপর তিনি যোগ দেন ইতালিয়ান জয়ান্ট এসি মিলানে। সেখানে তিনি প্রথম বারের মতো চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জেতার পাশাপাশি কোপা ইতালিয়া ও ইউরো সুপার কাপ জেতেন। বয়সের ভারে যখন পারফরম্যান্সের গ্রাফটা যখন নিচের দিকে যাচ্ছিলো, তখন ইউরোপ ছেড়ে আবারো ব্রাজিলে ক্লাব ক্রুজেইরোতে ফিরে আসেন। এক সিজন পরেই আবার ফিরে  ইউরোপে পাড়ি জমান। যোগ দেন গ্রীসের ক্লাব ওলিম্পিয়াকোসে। সেখানে টানা ৩ সিজন লিগ টাইটেল জিতেন রিভালদো। এরপর কয়েক বছর গ্রীসের এথেন্স সহ উজবেকিস্তানের বুন্নোদকোরে কয়েকটা ক্লাব ঘুরে ফিরে আসেন শৈশবের ক্লাব মগি মিরিমিতে। এরপর সাও পাওলো, এঙ্গোলার কাবুস্ক্রোপে, সাও কেইটানো হয়ে ৪৫ বছর বয়সে অবসর নিয়েছেন মগি মিরিমিতে।

ব্রাজিলের জার্সিতে রিভালদো

করিন্থিয়ান্সে থাকাকালীনই ১৯৯৩ সালে ২১ বছর বয়সে সর্বপ্রথম ব্রাজিল দলে ডাক পান। এরপর ১৯৯৬ সালে ব্রাজিলের অলিম্পিক দলে ডাক পান তিনি। কিন্তু অধরা অলিম্পিক স্বর্ণ জয় করতে গিয়ে দেশের মানুষের কাছে রীতিমতো খলনায়ক বনে যান রিভালদো। আটলান্টা অলিম্পিকে সেমিফাইনালে নাইজেরিয়ার বিপক্ষে রিভালদোর ভুল পাস থেকে গোল পেয়ে যায় নাইজেরিয়া। যদি এতটুুকুতেই ক্ষান্ত থাকতেন তাহলে হয়তো খলনায়কের তাকমাটা তার গলায় এসে পড়তো না। ম্যাচের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে গোলকিপারকে একা পেয়েও গোল করতে না পারার মধ্য দিয়ে পুরোদস্তর খলনায়ক বনে যান তিনি। এ নিয়ে দেশবাসীর কঠোর সমালোচনার মুখেও পড়েছেন বেশ। কিন্তু বিজয়ীরা তাদের সর্বস্বটুকু দিয়ে শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ রাখতে হয়তো সবচেয়ে বড় মঞ্চটি খোঁজেন অপেক্ষা করে। তারা সময়ের অপেক্ষায় থাকেন; রিভালদোর বেলায়ও তেমনই হয়েছে। অলিম্পিকে খলনায়ক হওয়ার পরের বছর ব্রাজিলকে কনফেডারেশন কাপ জেতাতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন রিভালদো। ব্রাজিলকে কনফেডারেশন কাপ জেতারনোর পরও কোনো এক অদ্ভুত কারণে মিডিয়ার চক্ষুশূল ছিলেন রিভালদো। ১৯৯৮ বিশ্বকাপে পুরো আসরে  দুর্দান্ত পারফর্ম করা সত্ত্বেও ফাইনালে ফ্রান্সের কাছে হেরে বিদায় নেওয়ার পর আবারও মিডিয়া রিভালদোকে জাতির সামনে বাজে ভাবে উপস্থাপন করা শুরু করে। ম্যাচ নিয়ন্ত্রণ করতে না পারার দায়টা রিভালদোর ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়ে তাকে আবারো খলনায়ক রূপে উপস্থাপন করে। রিভালদো সব সমালোচনার জবাব দেন পরের বছর কোপা আমেরিকায় ৫ গোল করে সর্বোচ্চ গোলদাতা হওয়ার মাধ্যমে। একই সাথে ব্রাজিলকে জিতিয়েছেন কোপা আমেরিকা শিরোপা। সমালোচকদের মুখে চুনকালি দেওয়ার বাদ বাকি টুকু তোলা রাখেন ২০০২ বিশ্বকাপের জন্য। সেবার গ্রুপ পর্ব থেকে কোয়ার্টার ফাইনাল পর্যন্ত টানা ৫ ম্যাচেই গোল করেছেন তিনি। কোয়ার্টার ফাইনালে পিছিয়ে থাকা অবস্থায় ইংল্যান্ডের সাথে সমতাসূচক গোলটিও তারই করা। ফাইনালে অলিভার কান কে পরাস্ত করা রোনালদোর সেই গোলের ডি-বক্সের বাইরে থেকে জোরালো শট নিয়েছিলেন রিভালদো, অলিভার কান সেই শট ঠেকিয়ে দিলে ফিরতি শটে গোল করেন রোনালদো। এর কিছুক্ষণ পরই রাইট উইং থেকে আসা সহজ একটি পাসকে রিভালদো স্টেপ ওভার করে সামনে থাকা তিন জার্মান ডিফেন্ডারকে বোকা বানালেন। ফাকা স্পেসে বল পেয়ে জালে জড়িয়ে দেন রোনালদো। ব্রাজিলের ঘরে আসলো পেন্টা। দুই বার বিশ্বকাপ জেতাতে দুর্দান্ত পার্ফম করার পরও রোনালদোর দানবীয় পার্ফম্যান্স সব আলো কেড়ে নেয়, আর রিভালদো নামটা পর্দার আড়ালে চলে যায়।

বর্ণবাদ এবং সমালোচনার ঝড় মাথায় নিয়ে রিভালদোরা ফুটবল খেলেন বলেই হয়তো ফুটবলটা এতো সুন্দর। ক্লাসের ফার্স্টবয় না হয়েও একটা দলের সাফল্যের পেছনে রিভালদোদের মতো মানুষদের অবদান অনস্বীকার্য। ক্লাব এবং জাতীয় দল দুই জায়গাতেই ছিলেন আলোচনার বাহিরে। কিন্তু এরপরও পর্দার আড়ালে থেকে নীরবে-নিভৃতে নিজের কাজটুকু করে গেছেন টিকঠাক মতোই। বিনিময়ে রিভালদোরা আমাদের থেকে সেরার তাকমা প্রত্যাশা করে নি। যেটুকু প্রত্যাশা ছিলো সেটা হলো যথাযথ সম্মান আর ভালোবাসা, যেটা তারা ডিসার্ভ করে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *