বাংলাদেশের অনেকেই এখন উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য বিদেশের নামি-দামি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যাচ্ছে। অনেকেই পরিকল্পনা করছেন বাইরে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য। সে অনুযায়ী প্রস্তুতি গ্রহণেও চলে বিস্তর গবেষণা। কি করতে হবে, কি কি ডকুমেন্টস লাগবে, কত টাকা লাগবে, একাডেমিক রেজাল্ট ও অন্যান্য রেজাল্টের মাত্রা কত লাগবে সে বিষয়ে বিস্তর গবেষণা চলে সবার মধ্যে। তবে এই জানাশোনার চেষ্টার মাঝেও রয়েছে বেশকিছু সাধারণ ভুল ধারণা। আসুন জেনে নিই কি কি ভ্রান্ত ধারণা আমাদের মাঝে ছড়িয়ে আছে যা আমাদের পরিকল্পনাকে বাধাগ্রস্ত করে।
১. আইইএলটিএসের স্কোর ভালো থাকতে হবে। সবার মাঝেই সাধারণ ধারণা হলো আইইএলটিএস-এ ৭-৮ না থাকলে মনে হয় কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ হবেই না। অনেকের কাছে তো এটা মানসম্মানের বিষয়, আইইএলটিএস স্কোর ভালো না হলে ইজ্জতই থাকে না।
বাস্তবে ব্যাপারটা মোটেই তা নয়। বিশ্ববিদ্যালয় ভেদে এই স্কোর কমবেশি হতে পারে। কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয় ৬ বা ৬.৫ স্কোর থাকলেও আবেদন গ্রহণ করে। আরেকটি প্রচলিত ভুল ধারণা হচ্ছে, স্কোর ভালো হলেই বৃত্তি নিশ্চিত। আদতে এটাও সত্য নয়। আইইএলটিএস স্রেফ আবেদনের জন্য একটি মানদণ্ড; এর সঙ্গে আপনার বৃত্তি পাওয়ার সম্পৃক্ততা নেই। স্কোর ভালো থাকলে ভালো, তবে ভালো হলেই আপনি বৃত্তি পাবেন, এমন কোনো নিশ্চয়তা নেই। আবার স্কোর হাতে পেয়ে তবেই আবেদন করতে হবে, তা-ও কিন্তু নয়। অনেক বিশ্ববিদ্যালয় স্কোর ছাড়াই আবেদনের সুযোগ দেয়। কিংবা এমন শর্ত জুড়ে দেয়—ভর্তির আবেদন তখনই নিশ্চিত হবে, যখন আপনি স্কোর জমা দেবেন। আবার অনেক বিশ্ববিদ্যালয় অন্যান্য যোগ্যতা থাকা সাপেক্ষে আইইএলটিএস স্কোরের মানদণ্ড শিথিল করে।
২. দুই নম্বর ভুল ধারণাটি সত্যিকার অর্থেই ‘দুই নম্বর’ একটা মিথ। সেটা হলো—সিজিপিএ ভালো হতে হবে। অনেকেই মনে করেন, বেশি সিজিপিএ না হলে বিদেশে পড়তে যাওয়ার স্বপ্ন দেখাও পাপ। তবে এটা ঠিক যে, সিজিপিএ ভালো থাকাটা অবশ্যই বেশ ভালো, তার মানে এই নয় যে আপনার সিজিপিএ খারাপ হলেই যে আপনি আবেদন করতে পারবেন না কিংবা স্কলারশিপের জন্য বিবেচিত হবেন না, ব্যাপারটা তা নয়। সিজিপিএ কম হলেও অন্যান্য ক্ষেত্র, যেমন সহশিক্ষা কার্যক্রম, গবেষণা বা কাজের অভিজ্ঞতা দেখিয়ে আবেদন করা যায় এবং বৃত্তির সুযোগও পাওয়া যায়।
৩. ‘ফান্ডিং’ নিয়েও অনেকের মধ্যে ভুল ধারণা আছে। এই ভুল ধারণায় দুটি দিক আছে। এক, কেউ কেউ ‘ফুল ফান্ডিং’ ছাড়া পড়তে যাওয়ার কথা ভাবতেই পারেন না। দুই, কেউ কেউ মনে করেন, টাকা থাকলেই বিদেশে পড়তে যাওয়া যায়। এই দুটিই ভুল ধারণা। ফুল ফান্ডিং না থাকলেও আপনি বাইরে পড়াশোনা করতে পারবেন, তবে সে ক্ষেত্রে আপনাকে টিউশন ফি জোগাড়ের জন্য খণ্ডকালীন কাজ করতে হবে। আবার যাঁরা ভাবেন টাকা থাকলেই বাইরে পড়তে যাওয়া যায়, সেটিও ভুল। সে ক্ষেত্রে বড়জোর ভর্তি হতে পারবেন, কিন্তু পড়ালেখা চালিয়ে যেতে মেধা ও পরিশ্রমই আপনার সম্বল।
৪. অনেকে ভাবেন, বিদেশে পড়ালেখা করতে গেলে তেমন কষ্ট করতে হয় না, চাপটাপ নেই, ক্লাস করো আর মজা–মাস্তি করে কোনো রকম দিন কাটিয়ে দাও। ভিন দেশে পড়তে যাওয়া আপনার বন্ধুবান্ধবদের সুন্দর, ঝকঝকে ছবি দেখলেই ভেবে বসবেন না—‘খুব চিল হচ্ছে!’ এরা সারা সপ্তাহ প্রচুর পরিশ্রম করে পড়াশোনা করে আবার সাথে কাজকামও করে৷ সো সপ্তাহে শনি বা রোববারে একটু ঘুরতে তো যেতেই পারে, নাকি? তাই বলে এটা ভাবা ভুল, যে বিদেশ মানেই আরামদায়ক জীবন। এই ভুল ধারণা নিয়ে বিদেশে পড়তে গেলে বড়সড় ধাক্কা খাওয়ার আশঙ্কা আছে।
৫. পাঁচ নম্বর মিথ হলো—অনেকেই ভাবেন একবার বিদেশে যেতে পারলেই আর কোনো দুশ্চিন্তা নেই! বিদেশ মানেই দুই হাতে টাকা কামানো যায়! চাকরিবাকরি নিয়ে আর কোনো টেনশনই থাকে না! ভুল। পড়ালেখা শেষে আপনি বিদেশে কিংবা দেশে, যেখানেই কাজ করতে চান না কেন, সেই পরিশ্রম করেই আপনাকে নিজের জায়গা করে নিতে হবে। জীবনটা তো বাংলা সিনেমা নয় যে একটা বিদেশি ডিগ্রি থাকলেই আপনি বাড়ি-গাড়ি পেয়ে যাবেন। অতএব ভিন দেশে পড়ার ইচ্ছে যদি থাকে—পরিশ্রম করার জন্য, নিজের সেরাটা দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিন। ‘একবার বাইরে যেতে পারলেই লাইফ সেট’—আপনার ভাবনা যদি এমন হয় তাহলে ভবিষ্যতে আপনাকে ভোগতে হবে।
উপরোক্ত মিথ বা ধারণাগুলোর বাইরেও বিদেশে পড়তে যাওয়া সম্পর্কে আমাদের মধ্যে নানা ধরনের ভুল ধারণা আছে। আর তাই বিদেশে যাওয়ার আগে ভালো করে জেনে বুঝে নিজের জন্য উপযুক্ত দেশ, বিশ্ববিদ্যালয় এবং সাবজেক্ট নির্বাচন করা-ই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। সকলের জন্য নিরন্তর শুভকামনা।