Baikka Beel

বাইক্কা বিল: প্রকৃতির এক ষোড়ষী কন্যা

বাইক্কা বিল যেন প্রকৃতির এক ষোড়ষী কন্যা। প্রকৃতির মায়ায়  প্রাণ জুড়ানো শীতলতা নিতে বাইক্কা বিলের জুড়ি নেই। রুপসী বাংলার রূপকে এই জলাভূমি তার মাধুর্য দিয়ে ভরিয়ে দিয়েছে, দিয়েছে প্রানোচ্ছ্বাস। 

রূপের রানী বাংলাদেশের  আনাচে কানাচে ছড়িয়ে রয়েছে রুপ আর সৌন্দর্যের ডালি। আর এ সৌন্দর্যের সিংহ ভাগ জুড়ে  রয়েছে সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলার বিভিন্ন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত জায়গা সমুহে। যার রূপ লাবণ্য প্রতিনিয়ত মুগ্ধতা ছড়ায় ভ্রমনপিয়াসীদের মনে। তেমনি এক প্রাকৃতিক সৌন্দর্যময় এক জায়গার নাম হলো ‘বাইক্কা বিল’।

বাইক্কা বিলের নয়নাভিরাম সৌন্দর্য

মুলত জীববৈচিত্র‍্য রক্ষা করাই এই বিলকে অভয়ারণ্যে  হিসাবে ঘোষণা করার অন্যতম কারণ। বাংলাদেশের  অন্যতম বিল বা জলাভূমি বাইক্কা বিল। মৌলভীবাজার  জেলার প্রখ্যাত সমৃদ্ধ শহর শ্রীমঙ্গলের হাইল হাওরের  পূর্বদিকে প্রায় ১০০ হেক্টর আয়তনের জলাভূমি বাইক্কা বিল। ২০০৩ সালের ১লা জুলাই এই বিলকে বাংলাদেশের ভূমি মন্ত্রণালয়  মৎস্য সম্পদের অভয়ারণ্য হিসাবে সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত নেয়। এ বিল শুধু মাছের জন্য নয়, পাখি ও অন্যান্য প্রানীর জন্যও নিরাপদ আবাসস্থল। নয়নাভিরাম এই জলাভূমিতে ফুটে থাকে হাজারো শাপলা আর পদ্মফুল। বিলের পানিতে রয়েছে নানা জাতের দেশীয়  মাছ। বিলের পানিতে সকাল সন্ধ্যা লাফিয়ে বেড়ায় গঙ্গা ফড়িং এর দল। উড়ে বেড়ায় রঙ বেরঙের  প্রজাপতি। জানা অজানা নানা পাখ-পাখালির মিষ্টি মধুর সুরে আপনি হারিয়ে যাবেন অজানা ভালো লাগায়। এ যেন নিজেকে খুজে পাওয়া প্রকৃতির বিশালতায়। সংরক্ষিত এই মৎস্য অভয়াশ্রমে গত ৫-৬ বছর ধরে শীত মৌসুমে সাইবেরিয়াসহ সাত সমুদ্র তের নদী পার হয়ে অতিথি পাখি বাইক্কা বিলে আসছে।

এ বিলে মৎস্যসম্পদ যেমন বাড়ছে, তেমনি হাজার হাজার অতিথি পাখির আগমনে এলাকাটি মুখর হয়ে ওঠে। সে সঙ্গে শ্রীমঙ্গলের বাইক্কা বিল ধীরে ধীরে পরিণত হচ্ছে আকর্ষণীয় পর্যটন স্পটে। দেশ-বিদেশ ও দূরদূরান্তের মানুষ এ দর্শনীয় স্থানটি দেখতে ছুটে আসেন। বাইক্কা বিলের আকর্ষণে ছুটে আসা দর্শনার্থী, পর্যটক, প্রকৃতিপ্রেমী ও পাখি দর্শকদের জন্য সম্প্রতি এখানে একটি পর্যবেক্ষণ টাওয়ার নির্মাণ করা হয়েছে। এ পর্যবেক্ষণ টাওয়াটি দ্বিতলবিশিষ্ট। সিঁড়ি বেয়ে বেয়ে মুহূর্তেই পৌঁছা যায় উচ্চচূড়ায়। ওখানে সংরক্ষিত রয়েছে পাখি ও মাছের বিভিন্ন তথ্য। অতিথি পাখি কোন পথ ধরে আমাদের দেশে ছুটে আসে, তারও বর্ণনা আছে। টাওয়ারে বসে বসে দূরের পাখি কিংবা জলজ সম্পদকে স্পষ্টভাবে দেখার জন্য রয়েছে বাইনোকুলার ও টেলিস্কোপ। ইন্টিগ্রেটেড প্রটেক্টেড এরিয়া কো-ম্যানেজমেন্ট (আইপ্যাক) সূত্র জানায়, প্রতি বছর শীত মৌসুমে পানকৌড়ি, কানিবক, ধলাবক, ধুপনিবক, রাঙাবক, দলপিপি, নেউপিপি, পানমুরগি, বেগুনি কালেম, কালোমাথা, কাস্তেচড়া, ইত্যাদি। এ বিলের প্রধান আকর্ষণ বুনো হাঁস। তবে বালি হাঁস এ বিলের স্থায়ী বাসিন্দা। পানির নিচে দেশীয় মাছের আশ্রয়  আর পানির উপরে নানা জাতের দেশি ও পরিযায়ী  পাখির কিচিরমিচির মন্ত্রমুগ্ধ  করে রাখবে আপনাকে। প্রকৃতি  প্রেমীদের  চোখে এ কোন সেলুলয়েড  এর ফিতার দৃশ্যের  চেয়ে কম নয়।

বাইক্কা বিলে পদ্মফুল

শীতকালে পাখিদের আনাগোনা  বেড়ে বিলের আকর্ষণ  কে দ্বিগুন  করে দেয়। দেশি বিদেশি পর্যটক এর আনাগোণায়  মুখরিত  হয়ে থাকে বাইক্কা বিল।শীতে আসা পাখিদের  মধ্যে  গেওয়ালা বাটান, মেটোমাথা, চিটি, কালা পংখ, ঠেংগী ধলা বালি হাঁস, পাতি হাঁস, সরালী বাজ, মরচেরং, ভূতি হাঁস, ল্যাংগা হাঁস, গুটি ঈগল ইত্যাদি। ২০১১ সালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে এ বিলে ২০৩ প্রজাতির  পাখি আছে এর মধ্যে ১৫৩ টি পরিযায়ী  পাখি। স্থায়ীভাবে বসবাস করে ৫০ টি পাখি। আশার কথা হলো  এ জলাভূমি  কে সংরক্ষিত  ঘোষণা  করায় এখানে পাখির সংখ্যা  দিন দিন বেড়ে চলেছে যা পরিবেশের ভারসাম্য  রক্ষায়  যথেষ্ট  প্রভাব রাখবে। বাংলাদেশ বার্ড ক্লাব কর্তৃক পাখিদের গতিবিধি পরীক্ষা নীরিক্ষা  করার জন্য পাখিদের পায়ে পরানো হয়েছে  রিং। 

২০১১ সালে ৩১ প্রজাতির  পাখির  পায়ে এ রিং পরানো হয়। এর মধ্যে ১৭ প্রজাতির  পরিযায়ী  পাখি ও ১৪ প্রজাতির  স্থায়ীভাবে বসবাস কারী। ২০১১ সালে আরো ৪ টি জাতের পাখির দেখা মিলেছে এ বিলে। বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের তথ্য অনুযায়ী এগুলো হলো বড় ঠুটি নল ফুটকি, উদয়ি নলফুটকি, বৈকাল নলফুটকি, সাইস্কের ফুটকি।

বাইক্কা বিলের সৌন্দর্য আপনাকে মুগ্ধ করবেই

ঢাকা থেকে ট্রেন ও বাসে চড়ে শ্রীমঙ্গলে যাওয়া যায়। ঢাকার কমলাপুর থেকে সিলেটগামী উপবন, জয়ন্তিকা, পারাবত ও কালনি এক্সপ্রেস ট্রেনে শ্রীমঙ্গল যেতে পারবেন। শ্রেণিভেদে ভাড়া পড়বে ২২০ থেকে ১০০০ টাকা। এছাড়া হানিফ, এনা, শ্যামলী এবং সিলেট এক্সপ্রেসের মতো বাসে শ্রীমঙ্গল যেতে পারবেন। শ্রীমঙ্গল হতে ইজিবাইক, অটো রিকশা কিংবা মাইক্রো ভাড়া করে সহজে বাইক্কা বিল ঘুরে আসতে পারবেন।

ঢাকা থেকে শুধু বাইক্কা বিল ঘুরতে গেলে এক দিনের মধ্যেই ঢাকায় ফিরে আসা সম্ভব। রাত্রি যাপনের জন্য শ্রীমঙ্গল শহরে বিভিন্ন মানের আবাসিক হোটেল ও রিসোর্ট রয়েছে। উল্লেখযোগ্য হোটেল ও রিসোর্টের মধ্যে আছে হোটেল মেরিনা, প্যারাডাইস লজ, হোটেল মহসিন প্লাজা, নভেম ইকো রিসোর্ট, নিসর্গ ইকো কটেজ, শ্রীমঙ্গল টি রিসোর্ট, গ্র্যান্ড সুলতান টি রিসোর্ট, শান্তি বাড়ি ইত্যাদি।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *