MAG Osmani

বঙ্গবীর এম এ জি ওসমানী: আমাদের এক মহান সেনাপতি

জেনারেল মহম্মদ আতাউল গণি ওসমানী যিনি বঙ্গবীর এম এ জি ওসমানী নামে পরিচিত। যার নামটি বাংলাদেশের জন্ম-ইতিহাসের সাথে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত।
তিনি ১৯১৮ সালের ১লা সেপ্টেম্বর সুনামগঞ্জে জন্মগ্রহণ করলেও তার পৈত্রিক বাড়ি সিলেট জেলার বালাগঞ্জ থানার (বর্তমানে ওসমানী নগর উপজেলা) দয়ামীরে। তাঁর পিতা খান বাহাদুর মফিজুর রহমান, মাতা জোবেদা খাতুনের সংসারে দুই ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে সবার ছোট ছেলে ওসমানী। ওসমানীর জন্মের কিছুদিন আগে ১৯১৮ সালে তৎকালীন আসামের সুনামগঞ্জ সদর মহকুমায় সাব-ডিভিশনাল অফিসার হিসেবে খান বাহাদুর মফিজুর রহমান নিয়োজিত ছিলেন৷ চাকরিসূত্রে তাদের বসবাস ছিল সুনামগঞ্জ সদরেই। আর এখানেই জন্ম হয় বাঙ্গালির মহাবীর ওসমানীর।
শিক্ষা : 
পিতার চাকরির সুবাদে বিভিন্ন প্রান্তে তার শৈশব-কৈশোর কেটেছে। কিছুদিন পর বদলির আদেশ নিয়ে সুনামগঞ্জ থেকে চলে যেতে হয় গোহাটিতে ৷ ১৯২৩ সালে ‘কটনস্ স্কুল অব আসাম’-এ ভর্তি হবার মধ্য দিয়েই ওসমানীর শিক্ষাজীবন শুরু হয়। অত্যন্ত মেধাবী ওসমানীর প্রতি ক্লাসেই পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করাই প্রমাণ করে লেখাপড়ায় যে তিনি খুবই মনোযোগী ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি ১৯৩২ সালে সিলেট সরকারি পাইলট হাই স্কুল এ ভর্তি হন ৷ তৎকালীন সময়ে সিলেটের এই স্কুলটি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে পরিচালিত হতো৷ তারই ধারাবাহিকতায় ১৯৩৪ সালে সিলেট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন অসাধারণ কৃতিত্বের সাথে৷ সমগ্র ব্রিটিশ ভারতে এন্ট্রান্স পরীক্ষায় তিনি প্রথম স্থান লাভ করেন৷ এই অসাধারণ কৃতিত্বের জন্য ব্রিটিশ সরকার এম. এ. জি. ওসমানীকে প্রিওটোরিয়া পুরস্কার প্রদানের মাধ্যমে সম্মানিত করে। ১৯৩৮ সালে তিনি আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কৃতিত্বের সাথে স্নাতক ডিগ্রী লাভ করেন।

বঙ্গবীর এম এ জি ওসমানী

সেনাবাহিনীর জীবন :
বিশ্ববিদ্যালয় শেষ করে ওসমানী তৎকালীন সেনাবাহিনীতে যোগ দেন৷ ১৯৩৯ সালে তিনি ব্রিটিশ রয়্যাল আর্মড ফোর্সে ক্যাডেট হিসেবে যোগ দেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরুর পূর্বে, ১৯৩৯ সালে ৩রা জুলাই তিনি ব্রিটিশ ভারতীয় সেনাবাহিনীর চতুর্থ আরবান ইনফান্ট্রিতে যোগ দেন। দেরাদুনে ব্রিটিশ – ভারতীয় মিলিটারি একাডেমীতে প্রশিক্ষণ শেষে তিনি ১৯৪০ সালে ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে কমিশন প্রাপ্ত অফিসার হিসেবে যোগ দেজলন। ইতোমধ্যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে গিয়েছিল। ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর একটি চৌকস  ব্যাটেলিয়ানের কমান্ডিং অফিসার হিসেবে তিনি বার্মা (মিয়ানমার) সেক্টরে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তারই ধারাবাহিকতায় ১৯৪২ সালে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সর্বকনিষ্ঠ মেজর হিসেবে পদোন্নতি লাভ করেন। ১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর ওসমানী ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে লং কোর্স পরীক্ষা দিয়ে উচ্চ স্থান লাভ করে কৃতিত্বের পরিচয় দেন৷ সে বছর তিনি ইন্ডিয়ান পলিটিক্যাল সার্ভিসের জন্য মনোনীত হলেও তিনি সামরিক বাহিনীতেই নিজের ভবিষ্যৎ গড়ে তলার সিদ্ধান্ত নেন৷ দেশভাগের পর ১৯৪৭ সালের ৭ই অক্টোবর ওসমানী পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে লেফটেন্যান্ট কর্নেল পদমর্যাদায় যোগ দেন। ১৯৪৯ সালে তিনি পাকিস্তান আর্মির চীফ অফ জেনারেল স্টাফের ডেপুটি হিসেবে নিযুক্ত হন। ১৯৫১ সনে তিনি ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট এর ১ম ব্যাটেলিয়নের অধিনায়ক নিযুক্ত হবার ধারাবাহিকতায় তিনি চট্টগ্রাম সেনানিবাস প্রতিষ্ঠা করেন৷ 

১৯৫৫ সাল পর্যন্ত তৎকালীন পূর্ববাংলার বেশ কয়েকটি আঞ্চলিক স্টেশনের দায়িত্বও তিনি সফলতার সাথে পালন করেন৷ পরবর্তীকালে তিনি ১৪তম পাঞ্জাব রেজিমেন্ট-এর ৯ম ব্যাটেলিয়ানের রাইফেলস কোম্পানির পরিচালক, ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস (ই.পি.আর.)-এর অতিরিক্ত কমান্ড্যান্ট, সেনাবাহিনীর জেনারেল স্টাফ অফিসার হিসেবেও কৃতিত্বের সাথে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৫৬ সালে তিনি কর্নেল পদমর্যাদা লাভ করে সেনাবাহিনী সদর দপ্তরে জেনারেল স্টাফ এন্ড মিলিটারি অপারেশনের উপপরিচালক পদে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধে তিনি পাকিস্তানের হয়ে যুদ্ধ করেন৷ ‘ডেপুটি ডাইরেক্টর অব মিলিটারি অপারেশন’ হিসেবে যুদ্ধরত বিভিন্ন ফোর্সের সামরিক হেড কোয়ার্টারে যোগাযোগ রক্ষা করতেন তিনি ৷ পাক-ভারত যুদ্ধ যখন শেষ হয় তখন তার বয়স চল্লিশের উপরে৷ পাক-ভারত যুদ্ধে সফলতার পর, ১৯৬৬ সালের মে মাসে তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনী থেকে অবসরকালীন ছুটি নিয়ে পরের বছর (১৯৬৭ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি) অবসর গ্রহণ করেন।

পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কর্ণেল পদ থেকে অবসর গ্রহণের পর তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলন তথা স্বাধীনতা যুদ্ধেও ব্যাপক ভূমিকা পালন করেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর গঠিত মুজিব নগর সরকার জেনারেল ওসমানীকে মন্ত্রীর পদমর্যাদায় মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি হিসেবে নিযুক্ত করে। তার সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত , যুদ্ধনীতি ও যুদ্ধকৌশলে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জনের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে এগিয়ে যায় আর বাঙালি অর্জন করেএকটি স্বাধীন দেশ।

১৯৭৫ সালের কলংকিত ১৫ আগস্টের পরে ২৯ আগস্ট রাষ্ট্রপতি খোন্দকার মোশতাক আহমদ তাঁকে রাষ্ট্রপতির প্রতিরক্ষা বিষয়ক উপদেষ্টা হিসেবে নিযুক্ত হন। কিন্তু মেরুদণ্ডহীন মোশতাক সরকারের অবিমৃশ্যতায় ৩ নভেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে জাতীয় চার নেতার হত্যাকাণ্ডের অব্যবহিত পরেই তিনি উপদেষ্টার পদ থেকে পদত্যাগ করেন।

মুক্তিযুদ্ধ :
মুক্তিযুদ্ধ শুরুর প্রাক্কালেই ওসমানী সীমান্ত পার হয়ে ভারতে প্রবেশ করেন। ১১ এপ্রিল (১৯৭১) প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে যে ভাষণ দেন সেখানেই তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অবকাঠামো গঠনের কথা উল্লেখ করে এম. এ. জি. ওসমানীকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান সেনাপতি হিসেবে ঘোষণা করেন৷ এখানে উল্লেখ্য যে ১০ এপ্রিল বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র জারী করা হয় ও সরকার গঠন করা হয় এবং পরবর্তীকালে ১৭ এপ্রিল মুজিবনগরে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার শপথ গ্রহণ করে। ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল গঠিত মুজিবনগর সরকারে ওসমানীকে মুক্তিবাহিনীর প্রধান সেনাপতি হিসেবে ঘোষণা করা হয়।

ওসমানী’র নির্দেশনা অনুযায়ী যুদ্ধের সাংগঠনিক স্থিতিশীলতা ও যুদ্ধের গতিবিধি শক্তিশালী করতে সমগ্র বাংলাদেশকে ১১টি সেক্টরে ভাগ করা হয়। প্রতিটি সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার হিসেবে সেনাবাহিনীর একেকজন চৌকস অফিসারকে নিয়োগ দেয়া হয়। প্রধান সেনাপতি হিসেবে বিভিন্ন সেক্টর ও বাহিনীর মাঝে সমন্বয়সাধন করার পাশাপাশি, রাজনৈতিক নেতৃত্বের সাথে যোগাযোগ রাখা, অস্ত্রের যোগান নিশ্চিত করা ও গেরিলা বাহিনীর প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করাসহ প্রভৃতি কাজ সাফল্যের সাথে পালন করেন ওসমানী।

মুক্তিযুদ্ধে ওসমানী


১২ এপ্রিল থেকে মন্ত্রীর সমমর্যাদায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান সেনাপতি হিসেবে যুদ্ধ পরিচালনার দায়িত্বভার গ্রহণ করেন এম এ জি ওসমানী৷ যুদ্ধনীতির কৌশল হিসেবে প্রথমেই ভৌগোলিক অবস্থা বিবেচনা করে বাংলাদেশকে ১১টি সেক্টরে ভাগ করে নেন এবং একইসাথে বিচক্ষণতার সাথে সেক্টরগুলো নিয়ন্ত্রণ করতেও সক্ষম হন৷ পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ছিল দক্ষ এবং সংখ্যায় অনেক বেশি৷ এটা মাথায় রেখেই ওসমানীর রণকৌশলের প্রথম উদ্দেশ্য ছিলো শত্রুকে নিজেদের ছাউনিতে আটকে রাখা এবং তাদের যোগাযোগের সকল মাধ্যম বিচ্ছিন্ন করে রাখা৷ এজন্য এম. এ. জি. ওসমানী মে মাস পর্যন্ত প্রথাগত পদ্ধতিতে যুদ্ধ পরিচালনা করেন৷ কিন্তু মে মাসের পর প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কমসংখ্যক সৈন্য নিয়ে শত্রুকে ছাউনিতে আটকে রাখা গেলেও ধ্বংস করা সম্ভব নয়, এটা মাথায় নিয়েই তিনি যুদ্ধকৌশল পরিবর্তন আনতে সিদ্ধান্ত নেন এবং এ বিষয়টি তিনি সরকারকে জানিয়ে যুদ্ধেরবকৌশলগত পরিবর্তন আনার পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। এ উদ্দেশ্যে তিনি প্রাক্তন ইপিআর এর বাঙালি সদস্য, আনসার, মোজাহেদ, পুলিশ বাহিনী ও যুবকদের নিয়ে একটি সুসংগঠিত গণবাহিনী বা গেরিলা বাহিনী গঠন করেন।


স্বাধীনতা সংগ্রামে এম, এ. জি. ওসমানীর হাতে কোনো নৌবাহিনী না থাকলেও নিয়মিত নৌবাহিনীর কিছু অফিসার ওসমানীর সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখতেন৷ পাশাপাশি ফ্রান্সের জলাভূমিতে থাকা পাকিস্তানের ডুবোজাহাজের কিছু সংখ্যক কর্মীও মুক্তিবাহিনী তথা ওসমানীর সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন৷ নৌবাহিনীর অভাববোধ থেকেই কিছুদিন পর এম. এ. জি. ওসমানী তাদেরকে সাথে নিয়ে এবং কিছু সংখ্যক গেরিলা যুবককে এদের সাথে যুক্ত করে একটি নৌ-কমান্ডো বাহিনী গঠন করেন। স্বল্প সামর্থ্য নিয়ে আগস্টের মাঝামাঝি থেকে তাঁরা নদীপথে শত্রুর সকল ধরনের চলাচল প্রায় রুদ্ধ করে দেন বলা যায়। নৌবাহিনী গঠনের মাধ্যমে একটা বড় ধরনের সংকটের অবসান হলেও দেশ স্বাধীন হবার আগে আগে আরও একটা সঙ্কট এম. এ. জি. ওসমানী অনুভব করেন। আর  সেটা হচ্ছে তাঁর হাতে কোনো বিমানবাহিনী না থাকা।  শেষের দিকে দুটি হেলিকপ্টারের সাথে একটি অটার আর তাঁর নিজের চলাচলের একটি ডাকোটা নিয়ে ছোট্ট একটি বিমানবাহিনী গঠন করেছিলেন তিনি৷


পাক হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণ :
পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী ১৯৭১ এর ১৬-ই ডিসেম্বরে মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় সামরিক বাহিনীর যৌথ কমান্ডের কাছে আত্মসমর্পণ করে। সৃষ্টি হয় স্বাধীন বাংলাদেশের, বিশ্বের মানচিত্রে স্থান করে নেয় নজিরবিহীন ত্যাগ ও রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীন পতাকা খচিত একটি দেশ, বাংলাদেশ। যদিও অফিসিয়াল প্রটোকলের ভারসাম্যহীনতার কারণে এই আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে মুক্তিবাহিনীর প্রধান সেনাপতি জেনারেল ওসমানী উপস্থিত ছিলেন না।

রাজনৈতিক জীবন : 
আতাউল গণি ওসমানী ১৯৭০ সালে আওয়ামী লীগে যোগদান করার মাধ্যমে তাঁর রাজনৈতিক জীবনের সূচনা করেন। সত্তরের ঐতিহাসিক সাধারণ নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হিসেবে অংশ নিয়ে   পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন। যদিও সেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করতে পারে নি। কিন্তু ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল মুজিবনগরে যে অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকার হয় সেখানে ওসমানী বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী ও মুক্তিবাহিনীর প্রধান সেনাপতি নিযুক্ত হন, যা একজন মন্ত্রী পদমর্যাদার ছিল। স্বাধীনতার পর ১৯৭১ সালের ২৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সরকার তাঁকে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর জেনারেল পদে উন্নীত করে এবং তাঁর এই পদোন্নতি ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর থেকে কার্যকর করা হয়। পরবর্তীতে ১৯৭২ সালের ৭ এপ্রিল থেকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে জেনারেল পদ বিলুপ্ত হওয়ার পর তিনি সামরিক বাহিনী থেকে অবসর গ্রহণ করেন। অবসর কালীন সময়ে  তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মন্ত্রীসভার জাহাজ চলাচল, অভ্যন্তরীণ নৌ ও বিমান চলাচল মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব লাভ করেন। পরবর্তীতে ১৯৭৩ সালে জাতীয় সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়ে নতুন মন্ত্রী সভায় ডাক, তার ও টেলিফোন, যোগাযোগ, জাহাজ চলাচল, অভ্যন্তরীণ নৌ ও বিমান চলাচল মন্ত্রী হিসেবে পুনরায় দায়িত্ব লাভ করেন। তবে রাজনৈতিক মতানৈক্যের জেরে ১৯৭৪ সালের মে মাসে তিনি মুজিব সরকারের মন্ত্রীসভা থেকে পদত্যাগ করেন। এছাড়াও তিনি ১৯৭৫ সালে সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে দেশে একদলীয় সরকারব্যবস্থা(বাকশাল) প্রবর্তনের বিরোধিতা করে তিনি যুগপৎ সংসদ-সদস্য পদ এবং আওয়ামী লীগের সদস্য পদত্যাগ করেন, যা তাঁকে আলাদা একটি রাজনৈতিক দল গঠনে উদ্বুদ্ধ করে।

রাজনৈতিক দল গঠন :
আওয়ামী লীগ থেকে পদত্যাগ করার পরে ওসমানী ১৯৭৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে নিজেকে সভাপতি রেখে জাতীয় জনতা পার্টি নামে একটি রাজনৈতিক দল গঠন করেন। নিজের রাজনৈতিক দলের ব্যানারে তিনি ১৯৭৮ সালে গণতান্ত্রিক ঐক্যজোট মনোনীত প্রার্থী রূপে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হন। একইভাবে ১৯৮১ সালে জাতীয় নাগরিক কমিটির প্রার্থী হিসেবে পুনরায় তিনি রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন এবং পরাজিত হয়ে কার্যত রাজনৈতিক জীবনে যতিচিহ্ন এঁকে দেন।
মৃত্যু: 
১৯৮৩ সালে শারীরিক কিছু জটিলতার কারণে চিকিৎসা গ্রহণ করতে গেলে ওসমানীর শরীরে ক্যান্সার ধরা পড়ে। ফলে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে লন্ডন নিয়ে যাওয়া হয় এবং লন্ডনের সেন্ট বার্থলোমিজ হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে তাঁকে চিকিৎসা দেয়া হয়।  চিকিৎসার শুরুর দিকে তাঁর শারীরিক অবস্থার কি উন্নতি হলেও ধীরে ধীরে তিনি শারীরিকভাবে ভেঙে পড়েন। যেখান থেকে আর ফিরে আসা সম্ভব হয় নি বাংলার এই বীর সেনাপ্রধানের। চিরকুমার এই বীর মুক্তিযোদ্ধা জেনারেল মুহম্মদ আতাউল গনি ওসমানী লন্ডনে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৯৮৪ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।
লন্ডনে তাঁর প্রথম জানাজা শেষে তাঁকে দেশে এনে ২০ ফেব্রুয়ারি তার মরদেহ সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় রাখা হয়। সেখানে তার ২য় জানাজা অনুষ্ঠিত হওয়ার পর একটি সামরিক হেলিকপ্টারে করে মরদেহ তাঁর পৈতৃক নিবাস সিলেটে আনার পর সিলেট আলীয় মাদ্রাসা মাঠে ৩য় জানাজা শেষে শাহজালাল(র:) এর দরগায় মায়ের কবরের পাশে সমাহিত করা হয়। বাংলাদেশ কখনোই এই বীরযোদ্ধাকে ভুলবে না, যতদিন এই দেশ থাকবে ততদিন অমলিন থাকবে এম এ জি ওসমানীর কীর্তি। আল্লাহপাক এই মহান দেশপ্রেমিককে জান্নাতের সর্বোচ্চ শান্তি দান করুন, আমিন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *