করোনা ও সুযোগ ব্যয়ের পরিবর্তন

করোনা পরিস্থিতির কারণে চাকরির বাজার কি স্থিতিশীল থাকবে? আমার মনে হয় না, সরকার অবশ্যই এই জায়গাতে ব্যয় সংকোচন নীতি অবলম্বন করবে। খুব অল্প পরিসরে চাকরিতে প্রবেশ করার সুযোগ হয়তো থাকবে, তবে এতে প্রতিযোগিতা হবে প্রচন্ডরকম হাড্ডাহাড্ডি। এই অবস্থায় চাকরীর প্রস্তুতি কেমন নিতে হবে? কেমন হবে চাকরির ধরণ? আপনারা যারা চাকরি নিয়ে ভাবছেন তাদের আসলেই নতুন করে ভাবা উচিত। ভাবনার খোলনলচে পরিবর্তন করে নিতে হবে পুরোপুরি। প্রতিটি মহামারীতেই অর্থনীতি সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনৈতিক প্রপঞ্চকে লাইনে আনতে সরকার প্রথম যে কোপ দিবে তা হলো সরকারি সেবায় কৃচ্ছসাধন।

আবার প্রতিটি মহামারী কিন্তু আপনার জন্য নতুন এক অবারিত সম্ভাবনাও নিয়ে আসবে। ভাবছেন কিভাবে? খুব সহজ, শুধু দরকার একটু সৃজনী শক্তিকে কাজে লাগানোর সক্ষমতা এবং নিজের উদ্ভাবনী শক্তির আবিষ্কার করা। এই দুটো কাজ করতে পারলেই মহামারী আপনার জন্য শাপেবর হতে পারে। ১৯১৯-২০ সালের স্পেনিশ ফ্লু মহামারী যে অর্থনৈতিক ধাক্কা দিয়েছিলো তা চুড়ান্তরূপ লাভ করে ১৯২৯-৩০ সালে এসে, তখনি মহামন্দা তার চুড়ান্তরূপ লাভ করে। পৃথিবীর অনেক শক্তিশালী দেশেও দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছিলো তখন। আবার এই সময়কালেই অনেক বড় বড় কোম্পানীর তাদের আগমনী বার্তা দিতে শুরু করে।

আপনারা যারা চাকরি ছাড়াও অন্যকিছু করার স্বপ্ন দেখেন তারা খুব ভালোভাবেই টিকে থাকতে পারবেন, শুধু দরকার মনোবল আর আত্মবিশ্বাস। এই মহামন্দার ফলেই পৃথিবীতে গ্রীন রেভুলিউশন শুরু হয়েছিলে কৃষি খাতে, তেমনি বিপ্লব শুরু হয়েছিলো প্রযুক্তি খাতেও। হয়তো ভাবছেন ব্যবসায় আরম্ভ করবো বা উদ্যোক্তা হবো, এতো পুজি কই পাবো? আসলে এক্ষেত্রে পুজি হলো মাইনর একটা বাধা, আসল বাধা হলো আপনার নিজেকে আবিষ্কার করার নেশা আছে কি না। যদি থাকে তাহলে ছোট্ট থেকে শুরু করুন, শুন্য থেকে শুরু করার কথা ভাবুন। দেখবেন পথ আপনার পায়ের নিচে এসে ঠেকেছে। আপনার বাবার যদি কৃষি জমি থাকে তাহলে এখনি পরিকল্পনা করুন কিভাবে কি করবেন, যদি পুকুর থাকে তাহলে এখনি ভেবে নিন কি কি মাছ আপনার জন্য লাভজনক হবে? আর হাতে যদি সামান্য কিছু টাকাপয়সা থাকে তাহলে মানসিক প্রস্তুতি নিন কয়েকটা গাইগরু বা ষাড়গরু কিনে খামারি হবার। আপনি ভাবতেও পারবেন না করোনা পরিস্থিতি আপনার জন্য কি wonderful revenue নিয়ে অপেক্ষা করছে।

আর প্রযুক্তি বাজার হয়ে যাবে আরো উন্মুক্ত আরো উদার, কারণ অনেক দেশই ফ্রিল্যান্সারদের মাধ্যমে কাজ আদায় করে নিতে চাইবে কম খরচে, তাই যদি কোন কাজে সামান্য দক্ষ হোন তাহলে এখনি দক্ষতার উৎকর্ষ সাধনে নেমে পড়ুন। নিজেকে নিয়ে পরিকল্পনা করুন, প্রচুর বই পড়ুন, এই সময়ে ফেসবুকে সময় নষ্ট না করে গুগলে দেখুন জনপ্রিয় স্টার্টআপগুলো কি কি হতে পারে আর আপনার জন্য কোনগুলো কার্যকরী হতে পারে। পড়ালেখা করে চাকরিই করতে হবে এমন ভাবনা ঝেড়ে ফেলুন, কাজে লাগান এই অলস সময়কে। নিজেকে জানুন, নিজেকে বাচিয়ে রাখুন, বেচে থাকাটাই এখন সবচেয়ে বড় আয়!! ভালো থাকুন, আশেপাশের সবাইকে ভালো রাখুন!!

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *